Header Ads

Header ADS

বাড়িতে কম টাকা পাঠিয়ে,কম খেয়ে, টিকে থাকার চেষ্টা

 

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করছে বিভিন্ন সংগঠন

ঢাকার কারওয়ান বাজারে লেবু বিক্রির আয় থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার টাকার মতো পরিবারকে পাঠাতেন মো. মিন্টু। কিন্তু নিজের খাওয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন এক হাজার টাকার বেশি পাঠাতে পারছেন না। অনেক সময় আড়তদারকে লেবুর টাকাও দিতে পারেন না।

এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গতকাল শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে লেবু বিক্রি করছিলেন। আয়, নিত্যপণ্যের দাম ও সংসারের ব্যয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা দিমু, দিতেছি বইলা পরিবাররে যেমন ঘুরাইতেছি, তেমনি ঘুরাইতেছি আড়তদাররে।’

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষেরা বড় সংকটে পড়েছেন। চাপে পড়েছেন মধ্যম আয়ের মানুষেরাও। তাঁরা নানাভাবে খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন। শুরুতেই কাটছাঁট হচ্ছে খাবারের ব্যয়। পুষ্টিকর খাবার বাদ দিতে হচ্ছে।

লেবু বিক্রেতা মো. মিন্টুর পরিবারে স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। তাঁরা থাকেন চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায়। তিনি নিজের এক দিনের তিন বেলার খাবারের ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরে জানান, গত বৃহস্পতিবার তিন বেলা খেতে তাঁর খরচ ছিল ২২০ টাকা। একই ধরনের খাবার মাস ছয়েক আগেও দেড় শ টাকায় খাওয়া যেত।

মিন্টু বলেন, তিনি সকালে ডিম, সবজি ও রুটি এবং দুপুর ও রাতে মাছ অথবা মাংস দিয়ে ভাত খান। এখন এক বেলায় মাছ-মাংস দিচ্ছেন। কারণ, ব্যয়ে পোষানো যায় না। লেবু বিক্রি করে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো থাকে। এখন নিজেরই ৩০০ টাকার মতো ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।

মিন্টু বলেন, ‘পরিবার টাকা চাইতেছে। দিতে পারতেছি না। এমন একটা সময় যাইতেছে, বলতেও পারতেছি না, কানতেও পারতেছি না।’ আড়তদারের কাছ থেকে ৪০০ টাকার লেবু বাকিতে এনেছিলেন মিন্টু। গতকাল বিকেলে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই আড়তদার, বিক্রি হলেই টাকা আদায় করে নেবেন।

দেশে এক বছর ধরেই ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছিল। চালের দাম আগে থেকেই চড়া। কয়েক মাসে বেড়েছে আটা, ময়দাসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ সংকট, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং দেশে ডলারের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় আমদানি করা সব পণ্যের দাম বাড়ছে। সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট—সবকিছুর দামই বাড়তির দিকে।
একসঙ্গে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কারওয়ান বাজারে ফলের জুস বানিয়ে বিক্রি করেন মো. সানাউল্লাহ। তাঁকেও তিন বেলা হোটেলে খেতে হয়। তিনি গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের নাশতায় একটু বেশি খরচ করে ফেলেছিলেন। এ জন্য দুপুরে আর খাননি।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘এমনভাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে যে খরচের কথা শুনলেই মাথা গরম হয়ে যায়।’ তিনি জানান, শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও পাঁচ ছেলেমেয়ে থাকে। কয়েক মাস আগেও প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন। এখন পারেন না। চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ছয় হাজার টাকা পাঠাতে পেরেছেন।

চাপ তৈরি হয়েছে মধ্যম আয়ের পরিবারেও। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তিনি প্রতি মাসে সাধারণত তিন কেজি গরুর মাংস কেনেন। এ মাসে কিনেছেন দেড় কেজি।

মধ্যবিত্ত পরিবার মাংস কেনা কমিয়ে খরচ সামলানোর চেষ্টা করছে, দরিদ্রের কাছে ভাত জোটানোই কষ্ট।


প্রথম আলো খবর

No comments

Powered by Blogger.