Header Ads

Header ADS

আঁধার রাতেল মুসাফির (র্পাট-৪ ) সেন্টাফের সেনা ছাউণী


 

৪ ২১ সাল। বিদায়ী মাসের এক সােনালী সকাল। ঝিলিমিলি সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে সছিল চারদিকে। দক্ষিণের পাহাড়ী এলাকা থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছিল কুয়াশার কাচৰ সিরানবিদা, আলফাজরা আর আলহুমার পর্বত চুড়ায় ঝলমল করছিল বরফের শাদা টপি। সচল হয়ে উঠছিলাে সেন্টাফের ফৌজি ক্যাম্প। খীমার অল্প দূরের এক পাহাড়ে দাঁড়িয়েছিলেন রাণী ইসাবেলা। তার দৃষ্টির সামনে খেলা করছিল গ্রানাডার আবছা ছবি। কখনাে সে দৃষ্টি ছাউনি ছাড়িয়ে ছুটে যেত ভিগার বিরাণ বস্তির দিকে। বস্তির ধ্বংসস্তুপ যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রমাণ দিচ্ছিল। নিমিষে তার দৃষ্টি আবার ঘুরে যেত সে যাদুর শহরের দিকে, দু’মাইল দূর থেকে যাকে বার বার দেখেও তিনি তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। যে শহরের গম্বুজ আর আকাশ ছোঁয়া মিনার তার মনের ক্যানভাসে আঁকছিল রঙিন ছবি। | যুদ্ধের দিনগুলােতে যখন তিনি এ পাহাড়ের ওপর থেকে প্রথমবার গ্রানাডার দৃশ্য দেখেছিলেন, সূর্য তখন ডুবাে ডুবাে। তার মনে হয়েছিল, সেন্টাফ আর আলহামলার দূরত্ব মুহূর্তে ঘুচে গেছে। এরপর থেকে এ পাহাড় হয়েছিল তার নিত্য বিচরণ ক্ষেত্র। পাহাড়ে আরােহণের জন্য পথ করে দেয়া হয়েছিল। পর্বত-চুড়ায় টানানাে হয়েছিল রাজকীয় শামিয়ানা।

সাধারণত শাহী খীমা থেকে বেরােলে চাকরাণী আর খাদেমার বিরাট দল থাকত


তার সাথে। কিন্তু মন খারাপ থাকলে নিজস্ব পরিচারিকাকেও তিনি সইতে পারতেন। আজ যখন শাহী খীমা থেকে বেরুলেন, সাথে ছিল মাত্র দু’জন খাদেমা। কিন্তু পাহাডেন চড়ে ওদেরও বিদায় করে দিলেন তিনি।

রাণীর উদ্বেগের কারণ ছিল, কার্ডিজের বিশপ এবং গীর্জার বিচারক যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরােধিতা করে ফার্ডিনেন্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন, চুক্তি ভেঙ্গে সমগ্র শক্তি নিয়ে গ্রানডাহামলা করতে।

এ চিঠির জওয়াব দেয়া জরুরী ছিল। কিন্তু ফার্ডিনেন্ড জেমসের চিঠিতে হালকা নজর বুলালেন মাত্র। রাতের খাবারের সময় রাণী চিঠির প্রসঙ্গ তুললে তিনি বললেনঃ ‘এখন আমি পরিশ্রান্ত। ভােরের দিকে চিন্তা করব।

ভাের হতেই বেরিয়ে গেলেন তিনি।

চাঁদোয়ার নীচে খানিক দাঁড়িয়ে রইলেন ইসাবেলা। পিছু সরে বসলেন একটা চেয়ারে। হঠাৎ ঘােড়ার শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে ডানদিকে তাকাতে লাগলেন।

চূড়ায় উঠে ঘােড়া থেকে নেমে এগিয়ে এলেন ফার্ডিনেন্ড। রাণীর হাতে চুমাে খেয়ে। বললেনঃ “আজ দারুণ শীত । তুমি আরাে খানিক বিশ্রাম করবে?

ঃ মঞ্জিল এগিয়ে এলে মুসাফির বিশ্রাম নিতে পারে না। যুদ্ধবিরতির দশদিন শেষ হয়ে গেছে। আজ ভাের হতেই আপনাকে তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছিলাম। গ্রানাডা আর সেন্টাফের মাঝের এ ছমাইল পথ পার হতে আমাদের আরাে লাগবে ষাট দিন।

ও রাণী, কেন ভাবছ না এ ষাটদিন আর ছমাইল সে কওমের জীবন মৃত্যুর অন্তিম দূরত্ব, এ জমিনে যারা আটশাে বছর শাসন করেছে। আমি জানি তােমার মনে এখনাে


জেমসের চিঠির প্রভাব রয়েছে। কিন্তু বুড়াে পাদ্রী এর কি বুঝবে, যে কওমকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছি- কয়েক বছরের মধ্যে ওরাই জাবালুত্তারেক থেকে পিরেনিজের চূড়া পর্যন্ত গীর্জার পতাকাগুলাে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছিল। কে বুঝাবে জেমসকে, এ কওমের পতন যখন শুরু হয়েছিল, টাইগ্রীস থেকে আলকবীর উপত্যকা পর্যন্ত কয়েকটা মঞ্জিল পেরােতে গীর্জাগুলাের সম্মিলিত শক্তির লেগেছিল চারশাে বছর। কখনাে ওদের প্রতিশােধ স্পৃহা জেগে উঠলে ওদের কয়েকদিনের বিজয়ের মােকাবেলা করতে পারতাে না গীর্জার সন্তানেরা কয়েক বছরেও।

দু’জন বসলেন। রাণী বললেনঃ আমার চিন্তাধারা আপনার চেয়ে ভিন্ন নয়। স্পেনে মুসলমানদের স্বাধীনতার প্রদীপ নিভে যাচ্ছে আমার স্বামীর হাতে, এ যে আমার অহঙ্কার। আমার মনে হয়, জেমসের চিঠিটা ভালভাবে পড়লে, সে আপনার বিজয়কে গুরুত্ব দেয় না, এ ভুল ধারণা আপনার হতাে না।

| ‘আমি তার চিঠি পড়েছি। সে চাইছে চুক্তি ভেঙ্গে এ মুহুর্তে আমরা গ্রানাডা হামলা করি। সেতাে এক পাদ্রী। কিন্তু আমি এক দূরদর্শী সম্রাট। সে ভাবছে গ্রানাডাবাসী মরে। গেছে। এখন লাশগুলাে দাফন করাই বাকী। কিন্তু আমি মনে করি, গ্রানাডা এমন এক

আগ্নেয়গিরি, যার ভেতর এখনাে জ্বলন্ত লাভাস্রোত উথাল-পাতাল করছে। সে অগ্নিগিরির মুখে গীর্জার ক্ষমতার মসনদ তৈরীর পূর্বে আমাকে নিগ্রানাডা থেকে আমাদের ফৌজ মাত্র ছ'মাইল দূরে। তবুও আমাদের লড়াই বাইরে নয় গ্রানাডার চার দেয়ালের মধ্যে হবে, চুক্তির সময়ই এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হশ্চিত হতে হবে যে, শীতল হয়ে গেছে এর ভেতরের অগ্নিসিন্ধু।

য়েছি। বছরের পর বছর ধরে যে কাজ করতে পারত না আমাদের লশকর, ওদের হাতে তা হচ্ছে। গ্রানাডার অভ্যন্তরে থেকেই ওরা ভেঙ্গে দিচ্ছে কওমের মানসিক দৃঢ়তার কঠিন প্রাচীর। যাকে ওরা তাদের শেষ রক্ষক মনে করে, তাকে দিয়ে আমি এমন এক কাজ করাচ্ছি, যার জন্য আমাদের হাজারাে ব্যক্তির খুন ঝরাতে হতাে। আমার এ সফলতা কি গুরুত্বপূর্ণ নয়?

ও যিশুর কাছে প্রার্থনা করি, আবু আবদুল্লাহকে দিয়ে যা করাতে চাইছেন, তা যেন। সফল হয়। কখনাে আমার ভয় হয়, সে একবার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে, আবার তাকে বিশ্বাস করা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে?

ও কার্ডিজের বিশপও একথাই চিঠিতে লিখেছে। আমি তার ওপর নির্ভর করি একথা ঠিক নয়। সে বিলাস প্রিয়, অলস এবং অস্থিরচিত্ত যুবক। তবু তাকে আমার প্রয়ােজন। নিজের কওমের ধ্বংসের জন্য সে যা করেছে আর কাউকে দিয়ে তা হবে না। গ্রানাডা ফৌজের অবস্থা সে আহত সিংহের মত, ঝোপের আড়ালে যে নিজের যখম চাটছে। নিজে এগিয়ে সিংহকে আঘাত করব না। আমি চাইছি আবু আবদুল্লাহ আহত সিংহটাকে বেঁধে আমার সামনে হাজির করুক।

ও আপনার কি ধারণা, আগামী ষাট দিনের মধ্যে গ্রানাডাবাসী যদি যুদ্ধের ফয়সালা করে বসে আবু আবদুল্লাহ তাদের আবেগ উচ্ছাসের সামনে দাড়াতে পারবে?

ও প্রতিটি ঝড়ের সাথে উড়ে চলা এবং বানের পানির সাথে ভেসে চলার মত লােক আবু আবদুল্লাহ। হামেশাই তার কোন অবলম্বন প্রয়ােজন। আমার আশ্রয়ে পিতার বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ করেছিল। মুসা যখন তার হাত ধরলাে, দাঁড়িয়েছিল আমাদের বিরুদ্ধে। গ্রানাডায় এখন দ্বিতীয়, কোন মুসা নেই। সে এখন এমন এক ব্যক্তির কজায়, জয়-পরাজয়ে যার ওপর নির্ভর করে। তাকে সে এমন এক স্থানে নিয়ে এসেছে, যেখান। থেকে ফেরার আর কোন পথ নেই তার। মুসা তুর্কী আর বরবরীদের কাছে যে দূত পাঠিয়েছিল, ঈশ্বরের কৃপায় এখন সে মাল্টার কয়েদখানায় পড়ে আছে। ওরা বাইরের কোন সাহায্য পেলে আমাদের অবস্থা বদলে যেত।'

ঃ “যিশুর কৃপা, আপনার শেষ আশঙ্কাটাও দূর হয়েছে।

ও তাকে বন্দী করে যখন আমার সামনে আনা হবে, পরিচিতজনরা বলবে এ ব্যক্তি হামিদ বিন জোহরা, আমার সন্দেহ দূর হবে তখন।

উদ্বিগ্ন হয়ে রাণী প্রশ্ন করলেনঃ হামিদ বিন জোহরা ভেবে মাল্টাবাসীরা কি অন্য

কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না? আমাদের দূত হয়ত এ ব্যাপারে বেশী খােজ খবর নেয়নি!'

: না, আমাদের মাল্টার দূত অত্যন্ত হুশিয়ার। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে, তাকে নিয়ে আসার জন্য যে জাহাজ পাঠান হয়েছিল, এখনাে তা ফিরে আসেনি।

আপনি বলছিলেন তুর্কীদের জাহাজ রােম উপসাগরে ঘােরাফিরা করছে। আমাদের জাহাজ তাে কোন বিপদে পড়েনি?' ঃ হামিদ বিন জোহরাকে হাতে পাবার বিনিময়ে একটা জাহাজ তেমন কিছুই না।

‘সে কি এতই বিপদজনক? ও কখনাে একজন পাহারাদারের চিৎকার আঁধারের ভাঁজ কেটে ছুটে যায়। বস্তিবাসীর কানে। যেখানে রাতে হানা দেব একজন পাহারাদারের আওয়াজও যেন কণ্ঠ থেকে বের না হয় এর ব্যবস্থা করা আমার প্রথম দায়িত্ব।

প্রিয় খেলনা হারিয়ে যাওয়া শিশুর মত স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন রাণী।।

ও রাণী, আমি তােমাকে পেরেশান করতে চাইনি। আমার বিশ্বাস, নতুন বছরের শুরুতেই তােহফা হিসেবে গ্রানাডাকে তােমার সামনে পেশ করতে পারব। যুদ্ধের কোন। কোন চাল শুধু সিপাহসালার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। এমন কিছু কথা আছে তােমাকে যা এখনাে বলিনি। তার মানে তােমাকে আমি অবিশ্বাস করি তা নয়। বরং হঠাৎ খােশ খবর শুনিয়ে আরাে খুশী করে দিতে চাইছি।'

খুশীতে উজ্জ্বল উঠল রাণীর চেহারা। দাঁড়িয়ে কয়েক পা এগিয়ে গেলেন রাণী। হাতের ইশারায় পূর্ব দিকে দেখিয়ে ফার্ডিনেন্ড বললেনঃ “এই উপত্যকার ঢালুর সামনে দেখতাে!”

সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাণী বললেনঃ “ওখানে তাে অনেক লােক দেখা যায়। ওখানে কি করছে ওরা।

ও সড়ক মেরামত করছে। তুমি খেয়াল করনি, তিনদিন থেকেই চলছে এ কাজ। দৃষ্টিকে আরাে মাইলখানেক এগিয়ে নিলে গ্রানাডার লােকদের দেখতে পাবে। সম্ভবত নিজের অংশের কাজ ওরা শেষ করেছে?

ও কিছুদিনের মধ্যে সেন্টাফ থেকে রসদ নিতে পারবে, এ ধারণা গ্রানাডাবাসীদের। দিয়েছে আবুল কাশিম। আরাে বলেছে, তাদের প্রয়ােজনীয় জিনিসও কেনাকাটা করতে পারবে এখান থেকে। একটু এদিকে এসাে।'

চূড়ার অপর প্রান্তে পৌছলেন দু’জন। সেন্টাফে আসার উত্তর পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখতাে!’ ফার্ডিনেন্ড বললেন। এ পথে এত গরুরগাড়ী সম্ভবত আর দেখনি!

ও ‘ওরা কি করছে?' এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন রাণী।। মৃদু হাসলেন ফার্ডিনেন্ড। ও ফল-ফসল, তরি-তরকারী, কাঠ, ঘাস, ডিম, ভেড়া-বকরীর পালও দেখবে।

আমি নির্দেশ দিয়েছি দু’দিনের মধ্যে সেনাছাউনির গুদাম ভরে ফেলতে। পরশু। সেন্টাফের পথ খুলে দেয়া হবে, এ পয়গামও আবুল কাশিমের কাছে পৌচেছে। আফসােস, কাজটা একটু দেরীতে হয়ে গেল।

উৎকণ্ঠা লুকানাের চেষ্টা করে রাণী বললেনঃ “আসলেও এদিকটায় ব্যবসার পথ। খুলে দিতে চাইছেন নাকি?'

ও হ্যাঁ, আমি প্রমাণ করতে চাই, কার্ডিজের রহমদীল রাণী নতুন প্রজাদের না খেয়ে মরতে দেবেন না। জেমস নিশ্চয়ই আমার এ কাজ পছন্দ করবে না।

ও আমার তাে মনে হয় একথা শুনলে সে আত্মহত্যাই করতে চাইবে। | ফার্ডিনেন্ডের ঠোটে ফুটল মৃদু হাসি।

ও ‘তাকে এদুর বললেই কি যথেষ্ট নয়, অভাব আর গােলামীর স্থায়ী জাহান্নামে নিক্ষেপ করার বিনিময়ে গ্রানাডাবাসীকে অল্প ক'দিন ভাল খাবার দেয়া এমন কঠিন নয়? শুনে আশ্চর্য হবে, এ পরামর্শও দিয়েছে আবুল কাশিম। তার অভিযােগ, দক্ষিণের পাহাড়ী কবিতাগুলাের কাছ থেকে রসদ-সামান পেতে থাকলে ওদের সাথে গ্রানাডাবাসীর সম্পর্কে গভীর হয়ে যাবে। তার এ অভিযােগ আমি দূর করে দিয়েছি। এখন গ্রানাডাবাসীকে সস্তায় খাদ্যদ্রব্য দিতে হবে। ক্ষুধার্ত মানুষেরা পেট পুরে খেতে পারলে লড়াই না করে বরং আরামে ঘুমুতে চাইবে।

ও ‘এতসব জানলে অত পেরেশান হতাম না। তবুও একটা কথা আমি বুঝতে। পারছি না, আমাদের দুশমনরা এদেশ আটশ’ বছর শাসন করার পর নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে এতটা উদাসীন হল কি করে? এও কি ওরা বুঝে না, আমাদের জন্যে গ্রানাডার দুয়ার খুলে গেলে ওদের কিয়ামত শুরু হয়ে যাবে।

ঃ “ওরা সব জানে। কোন কওমের পতন শুরু হলে মুক্তির সােজা পথ ছেড়ে দেয়ার বাহানা খুঁজতে থাকে ওরা। নিজকে প্রবঞ্চিত করে এভাবে যে, এ পদ্ধতিই কল্যাণকার। জাতীয় চরিত্রের রূপ পাল্টে যায়। সংগ্রাম আর জিহাদের চেয়ে আত্মহত্যাকেই সহজ মনে করে। এই হচ্ছে আমাদের দুশমনদের অবস্থা। ওরা জিন্দেগীর জাতীয় জিম্মাদারী থেকে বাচার জন্য জাতির ধ্বংস থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখতে চাইছে। আমাদের খােশ। কিসমত, যাদের চিন্তাধারা ওদের শেষ আশ্রয়, তারাই নিজের ভবিষ্যত আমাদের সাথে। জুড়ে দিয়েছে।

ঃ ‘ক’হপ্তা পরই আবু আবদুল্লাহর বাদশাহী খতম হয়ে যাচ্ছে। আলফাজরায়। পাঠিয়ে দেয়া হলে একজন জমিদারের চেয়ে তার ক্ষমতা বেশী থাকবে না। আমরা ইচ্ছে করলেই গলা ধাক্কা দিয়ে সে জমিদারী থেকেও তাকে বের করে দিতে পারব। এসব কি • সে? আবু আবদুল্লাহর ক্ষমতা শেষ হয়ে গেলেও আবুল কাশিম উজির থাকবে, ৩ঃ এ ভুল ধারণা তার নেই। এর পরও কোন আশায় সে এ খেলা খেলছে?” হেসে ফেললেন ফার্ডিনেন্ড। বললেনঃ খেলা তার নয়, আমার। ওতাে কেবল

আঁধার রাতের মুসাফির

কা দেয়া করে। আবুল কাশিমের মত ধূর্ত ব্যক্তির পক্ষে তাকে বুঝানাে অসম্ভব ছিল না যে তা আপনার স্বার্থেই সবকিছু করছি। যুদ্ধ বিরতির আলােচনার সময়, তার বড় খাহেশe হাতিয়ার ছেড়ে দিলেও আলহামরা থেকে তাকে যেন বের না করা হয়।

ও ‘এ জন্যই কি আমার বিরােধিতা সত্ত্বেও তার শর্ত আপনি মেলে নিয়েছিলেন

ও তােমার বিরােধিতার প্রয়ােজন ছিল না। আমাদের লশকর গ্রানাডায় প্রবেশ করলে আবু আবদুল্লাহ আলহামরায় থাকবে না। তার আবদার গ্রহণ করার পূর্বেই এ। ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হয়েছি।'

| ঃ কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব! কি বলে আমরা চুক্তির বিরােধিতা করব? আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন রাণী।।

ঃ এর জন্য আমাদের কোন বাহানার প্রয়ােজন হবে না। সময়মত আবুল কাশিমই একদিনের মধ্যে এ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে। স্বেচ্ছায় সে তখন আলহামরা থেকে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু এ মুহূর্তে তাকে ভুলের মধ্যে রাখতে হবে। এজন্য তার কোন। আবদারই আমি বাতিল করিনি। তার দূতদেরও বুঝাতে চাইছি যে, অনেক কিছুই তাকে দিতে চাইছি। চুক্তির দ্বিতীয় দিন তাকে গােপনে জানিয়েছি, গ্রানাডার মুসলিম প্রজাদের আস্থা সৃষ্টির জন্য একজন সহকারী প্রয়ােজন। সে বেকুব ভাবছে, আলফাজরায় পাঠিয়ে তাকে আমি পরীক্ষা করছি। নয়তাে তাকেই আমার সহকারী বানাবাে। ও আত্মাকে প্রবঞ্চিত করতে চাইছে। আমিও ভুলের মধ্যেই রাখতে চাই তাকে।

ফার্ডিনেন্ড কতক্ষণ রাণীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর তার নিরুত্তাপ কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলঃ রাণী, আবুল কাশিমকে কোন প্রতিশ্রুতি দিতে হবে না। কওমের তরী ডুবে যাচ্ছে দেখে সে এখন আমাদের কিশতিতে সওয়ার হয়েছে। ও ভাবছে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের আশ্রয়ের প্রয়ােজন। এ জন্যই কওমের সাথে গাদ্দারীতে এত বেশী এগিয়ে গেছে সে। ফিরে যাবার কোন পথ এখন তার জন্য খােলা নেই। এবার নিশ্চিন্ত হলে তাে?

ঃ হ্যা। মুচকি হাসলেন রাণী । “শুকরিয়া । যিশু আমার প্রার্থনা শুনেছেন। আজই জেমসকে লিখব, রাজনীতির ব্যাপারে আপনার কোন পরামর্শ আমার স্বামীর প্রয়ােজন নেই। আপনি কেবল দোয়া করতে থাকুন। হায়! হামিদ বিন জোহরার কোন খবরও যদি পেতাম।

ও তাকে নিয়ে এত পেরেশান হওয়ার কোন কারণ নেই। ক'দিন আগেও ভেবেছি। গ্রানাডাবাসী যদি যােগ্য কোন নেতৃত্ব পায় এবং জনগণকে আবু আবদুল্লাহ আর আবল। কাশিমের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তােলার পাশাপাশি বাইরের কোন সাহায্য পেয়ে যায় তাহলে আমাদের এতদিনের সব চেষ্টা ধূলায় মিশে যাবে।'

উৎকণ্ঠিত হয়ে রাণী তাকিয়ে রইলেন সম্রাটের দিকেঃ এর কি কিছু বিকল্প আপনি

ভেবেছেন?”

ও ‘তােমায় একটা সুসংবাদ দিতে পারি। সব ষড়যন্ত্রের মূল আমি উপড়ে ফেলেছি। তােমার মনে আছে, শান্তি চুক্তির সাথে সাথে অল্প পশ্চিমে একটা ছাউনি তৈরী করার। নির্দেশ দিয়েছিলাম? ওখানে দিনরাত এখন পুরােদস্তর কাজ চলছে।

৪ হা, কিন্তু আমি মনে করি এ সংকীর্ণ উপত্যকা ফৌজের জন্য আদৌ উপযুক্ত নয়। গ্রানাডা যখন আমাদেরই হয়ে যাচ্ছে, অতিরিক্ত লশকর তাে প্রয়ােজন নেই। তারপরও এ অস্থায়ী ছাউনীর প্রয়ােজনটা কি?

ও যদি বলি ছাউনির কাজ শেষ হলেই গ্রানাডার চাবি থাকবে তােমার হাতে?

ও ভাল কোন খবর শােনাতে চাইলে আমায় আপনি পরীক্ষায় ফেলেন কেন?’ রাণীর কষ্ঠে অনুযােগ। ঈশ্বরের দোহাই, বলুন না কি হচ্ছে ওখানে?

বিজয়ীর মত রাণীর দিকে তাকিয়ে রইলেন সম্রাট।

ও রাণী নতুন ছাউনী আমার সিপাইদের জন্য নয়, বরং এ পিঞ্জরা দুশমনের জন্য তৈরী করছি। এ মাসের শেষের দিকে গ্রানাডার চারশাে অফিসার আমাদের হাতে তুলে দেয়া হবে। এরা হবে সেসব প্রভাবশালী বংশের যাদের সহযােগিতা ছাড়া গ্রানাডায় কোন বিপ্লবই সফল হবে না।।

রুদ্ধশ্বাসে স্বামীর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলেন রাণী।

: আবু আবদুল্লাহ এবং তার উজির কি ভেড়া বকরীর মত ওদের বেঁধে আমাদের কাছে নিয়ে আসবে? ফৌজ এবং এবং জনগণ এতে বাধা দেবে না?'

ও সে জিম্মা আবুল কাশিমের। আমার পরামর্শ মতই সে কাজ করছে। গ্রানাডাবাসীর জন্য ব্যবসায়ের পথ খুলে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ওরা ভাববে আমরা দুশমন নই এবং তাদের বন্ধু। তখন বাঁধা দেয়ার প্রশ্নই আসবে না।

ঃ চারশাে সম্মানিত ব্যক্তি?

ঃ হ্যা। ওরা এমন ব্যক্তি যাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য গ্রানাডার স্বাধীনতাকে ভুলে যাবে ওরা। তখন আমাদের প্রতিটি কথাই মানতে তারা বাধ্য হবে।

ঃ মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। আপনি কি মনে করেন আবুল কাশিম এমন কাজ করবে, জনগণও কোনই বাঁধা দেবে না?'

| ‘এ প্রস্তাব সে মেনে নিয়েছে। জনতার রােষ থেকে বাঁচার একটাই পথ, প্রিয়জনদের জন্য ওদের আত্মীয়রাই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তরবারী ধরবে।

জেমসের চিঠির ব্যাপারে আর আলােচনার প্রয়ােজন নেই। দূত ফিরে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আপনি যদি ওকে কিছু সময় দেন, কাল ভােরেই বিদেয় করে দেব।

তাকে ডেকে পাঠাব। আজ আমি ব্যস্ত। আবুল কাশিমের

? ঠিক আছে। কালই তাকে ডেকে পাঠাব। আজ আমি দূত আমার অপেক্ষা করছে হয়ত।



No comments

Powered by Blogger.