Header Ads

Header ADS

আঁদার রাতের মুসাফির (পার্র্ট -৩ ) আসয় বসতি



এ কিল্লা ধ্বংসের পর গ্রানাডায় রসদ পৌছার গুরুত্বপূর্ণ পথ সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ল। কাফেলা রাতের বেলা সড়ক পথে চলাচল করতে পারত। স্থানে স্থানে। তীরন্দাজদের পাহারা বসাতে হত তাদের জন্য। পূবের পাহাড়ী পথ ছিল এর চেয়ে

সামান্য নিরাপদ । কিন্তু এত সংকীর্ণ এবং কঠিন ছিল সে পথে কেবলমাত্র খচ্চরের পিঠে বোঝই করে মাল আনা নেয়া যেত। উনারে জিগার ফসলি জমিগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়ে ছিল দুশমনের উপর্যপী হামলায় । আগে শহর থেকে বেরিয়ে জওয়াবী হামলা হত ।

সে প্রচন্ড আক্রমনে সেন্টাফে  আর গ্রনাডার মাঝের  চৌকিগুলো সরিয়ে বাধ্য হত ওরা। হতাশ  ক’হাপ্তা ক’মাস পর অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হবে । ।  শেষ হবে দুঃসময়ের । আনাড়ায় খাদ্য আসার পদগুলি  নিরাপদ হলে দুঃখের দিন শেষ হবে।

যারা মনে করতাে শহীদি খুন বৃথা যাবে না, তারা ভাবতো-দুঃখ মুসীবতে অতিষ্ট  হয়ে একদিন বেরিয়ে আসিবে গ্রানাডাবাসী। আতেকা ছিল এদের দলে।

দূর দূরান্তের এলাকা ঘুরে জিহাদের দাওয়াত দিতেন হামিদ বিন জোহরা । একেকবার বেরুলে অনেক দিন আর নিজের গায়ে ফিরতেন না তিনি। জীবন বা রেখে যাৱা খাদ্য পৌছে দিত গ্রানাডায়, সাঈদ ছিল তাদের সাথে । সে কখনো হাশিমের । মারে এলে আতেকাকে শুনতো গ্রানাডাবাসীর সাহসের কাহিনী । একবার পাঁচদিন বস্তিতে ছিল না ও। সঙ্গীরা এসে বলল, ও খাদ্য নিয়ে গ্রানাডা পৌছতেই শহরের বাইরে দুশমনের উপর জওয়াৰী হামলা করেছিলেন মুসা। ফিরে না এসে সাঈদ চলে গেছে লড়

"ইয়ে। পাঁচদিন পর গায়ে ফিরে হাশিমকে ও জানাল, তার তিন ছেলেই নিরাপদে আছে। ওবায়েদ এবং আমীন সিপাহসালারের ঝটিকা বাহিনীতে যথেষ্ট নাম করেছে। বু বাহিনীর একটা দলের সালার হয়েছে ওমর। ও বলেছে, সুযােগ পেলে কিছু সময়ের জন্য বাড়ী আসৰে ।

এক রাতে নিজের কামরায় বসে বই পড়ছিল আতেকা। চাকরাণী এসে বললঃ সাঈদের আব্বাজান এসেছেন, সাঈদ ভাইও এসেছেন তার সাথে।

সাধারণতঃ দু'এক হপ্তা পর ফিরে এলে প্রথমেই আতেকার খোঁজ নিতেন হামিদ বিন জোহরা। বই বন্ধ করে ও তাড়াতাড়ি নীচে চলে এল। খানিক পর। ও দাঁড়িয়েছিল কামরার ছোট্ট দরজার কাছে। কানে এল হামিদ ও হাশিমের কথা বলার আওয়াজ। কে থেমে সসঙ্কোচে ভেতরে প্রবেশ করল ও। হাশিম ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'তুমি যাও আতেকা। আমরা কিছু জরুরী কথা বলছি।

ফিরে যাচ্ছিল ও। হামিদ বললেনঃ 'না বেটি, তুমি বস। সাঈদের সামনে যা বলা যায়, তোমার সামনেও তা বলা যাবে।'

শিমের দিকে চাইল আতে না। তার হাতের ইশারা পেয়ে বসে পড়ল হামিদের কয়ে মাথা নুইয়ে কিছুক্ষণ ভেবে হামিদ বললেনঃ 'গ্রানাডার বর্তমান অবস্থা ততােটা খারাপ নয়। মুসা প্রমাণ করলেন, এ মরাে মলো অবস্থায়ও পূর্বসুরীদের মান আমরা রাখতে পারি। কিন্তু শীত শুরু হল বলে। বরফপাত শুরু হলে গ্রানাডায় রসদ পৌছার ছোটখাট পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। মুসা তা করছেন, বাইরের কোন সাহায্য না এলে

থাকা ব্যয়ের মুসৰিচয়

 


অবরোধ দীর্ঘ হবে। এতে বিপদে পড়বে গ্রানাডাবাসী। সমুদ্রের ওপারের যেসব মুসলম দেশে দূত পাঠানো হয়েছিল ওরাও ফিরে আসেনি। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওরা সাগর পেরুতে পারেনি। খৃষ্টানরা গ্রেফতার করেছে হয়ত। তিনি চাইছেন, আমি যেন উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্কের শাসকদের কাছে তার পয়গাম নিয়ে যাই।

ও ‘মুসার সাথে দেখা করেছিলেন?' ও না, তিনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ও ‘আপনি সফরে ছিলেন, চিঠি পেলেন কিভাবে? ও সাঈদ এনেছে। দেরী না করেই আমি রওয়ানা হতে চাই।'

ঃ গ্রানাডা থেকে এসে তাে মুসার চিঠির কথা আমায় বলনি! সাঈদের দিকে তাকিয়ে বললেন হাশিম ।

ও ‘চিঠির কথা কাউকে বলতে তিনি আমায় নিষেধ করেছিলেন।'

ঃ এবার আমার এখানকার কাজ আপনাকে করতে হবে। হামিদ বললেন। | ঃ গ্রানাডাবাসীর আভ্যন্তরীণ কোন্দল, আবু আবদুল্লাহর অযােগ্যতা এবং গাদ্দারদের একের পর এক ষড়যন্ত্রের ফলে দক্ষিণের স্বাধীন কবিলাগুলাে নিরাশ হয়ে গেছে । ঐসব এলাকা থেকে রসদ আসতে থাকলেই কেবল লড়াই চালিয়ে যেতে পারতেন মুসা। আপনি ওদের বােঝাতে পারবেন যে, গ্রানাডাবাসী যদি আমাদের ব্যাপারেও হতাশ হয়ে যায়, আবু আবদুল্লাহর দরবারে ওদের দল ভারী হয়ে যাবে। মুসা লিখেছেন, কিছু নেতৃবন্দ আবু আবদুল্লাহকে অস্ত্র সমর্পণের পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের সমর্থন করছে বেশ ক’জন প্রসিদ্ধ আলেম । আমি যাচ্ছি এ আশায়, ভায়েরা আমাদের নিরাশ করবে না। গ্রানাডার গৃহবিবাদে ওদের মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু ফার্ডিনেন্ডকে পরাজিত করা লাখ লাখ মুসলমানের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার অনুপস্থিতিতে মনসুরকে দেখাশুনা করবেন আপনি। আমার বিশ্বাস, সাঈদকেও নিজের ছেলের মত মনে করবেন। আমি শীঘ্রই রওয়ানা হয়ে যাচ্ছি’, চিঠি পেয়েই এ খবর দিয়ে জাফরকে মুসার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।'

‘আমার দোয়া থাকবে আপনার সঙ্গে। কিন্তু আপনার কি মনে হয়, বাইরের মুসলমানরা আমাদের সাহায্য করবে? আর সে আশায় লড়াই চালিয়ে যাবে গ্রানাডাবাসী?'

| ‘আমরা আল্লাহর সাহায্য পাবার উপযুক্ত হলে, আমাদের নিরাশ হওয়া উচিৎ নয় । গ্রানাডাবাসীকে তাে অতীত পাপের প্রায়শ্চিত্য করতেই হবে। আবু আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ওরা লড়ছে তখত-তাজের হিফাজতের জন্য নয় বরং নিজের অস্তিত্বের জন্য। ওরা জানে, সাহস ও হিম্মত হারালে স্পেনের কোথাও তাদের আশ্রয় হবে না। হাম| তােমার নিরাশ হওয়া উচিৎ নয় । আজো ইসলাম দুনিয়ার সবচে' বড় শক্তি। আমাদের তুর্কী ভাইয়েরা ইউরােপের অহংকার মিশিয়ে দিয়েছে মাটির সাথে । পােলান্ড আর অষ্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে ওদের বিজয়ের সয়লাব। কস্তুনতুনিয়ায়

  রােম উপসাগরে ওদের যুদ্ধ জাহাজ ইটালী । তিউনেশিয়ার উপকূলে আগুন ঝরাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, ওরা স্পেনের উপকুলে যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে এলে পুরো জাতি নতুনভাবে জেগে উঠবে। দ’চার দল। আমাদের সাহায্যে ওরা এসে যাবে এমন দাবী করতে পারি না। তবে গ বিজয় অথবা শাহাদাত ছাড়া অন্য কোন পথ গ্রহণ না করলে নিশ্চয়ই আসবে নিরাশার আঁধারে যে কাফেলা আশার প্রদীপ জ্বেলে রাখে, প্রভাত রশি এ জন্য। সাহায্য ও বিজয়ের মালিকের কাছে দোয়া কবুল না হওয়া পর্যন্ত আশা ও সাহসের প্রদীপে খুন ঢেলে দেয়া গ্রানাডাবাসীর জন্য ফরজ। শাহাদাতই একজন মুসল। মানের বিজয়ের পথ। গ্রানাডার জনতাকে নিয়ে ভয় নেই। অপমানকর গােলামীর পরিবর্তে সম্মানজনক মৃত্যুর পথ ওদের দেখানাে যায়। স্পেনের উপকূল পর্যন্ত আমি ঘুরে এসেছি। দেখেছি সে সব শহর আর বস্তি, যাদের সম্পর্কে বলা হয় ওরা খৃষ্টানদের গােলামী কবুল করে নিয়েছে। কিন্তু আমি একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওদের বুক থেকে এখনাে নিঃশেষ হয়ে যায়নি আজাদীর স্বপ্ন ও আকাংখা । দিগন্তে আশার হালকা মেঘের আনাগােনা দেখলেই আবার জেগে উঠবে ওরা। সময়ের পরিবর্তনকে যারা ভাগ্য গড়ার সুযােগ মনে করে সে সব নেতাদের নিয়েই আমার ভয়। সেসব লােকদেরও আমি ভয় পাই, যারা ভাবে, তলােয়ার ছেড়ে দিলে শান্তির পয়গাম নিয়ে আসবে ফার্ডিনেন্ড । নিরাপদ থাকবে সহায় সম্পদ। নিশ্চিন্তে ওরা ঘুমুতে পারবে খৃষ্টানদের পাহারায়।

| কখনাে যদি মনে কর এসব আত্মপ্রবঞ্চিত লােকদের দল ভারী হয়ে গেছে, গ্রানাডায় গিয়ে ওদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা করাে। গ্রানাডার স্বাধীনতাকামী জনগণ আর সত্যপন্থী আলেমদের পাবে তােমার পাশে। এবার তােমার কাছে অনুমতি চাই বেরুবার । একান্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া আমার এ অভিযানের কথা কাউকে বলবে না। আতেকা, তুমিও সতর্ক থেকো।

উঠে দাঁড়ালেন হামিদ। ‘আপনি সকালেই যাবেন?' হাশিম বললেন। ঃ না, এখুনি যাচ্ছি। বাড়ীতে আমার ঘােড়া প্রস্তুত।' ঃ আর কে যাবে আপনার সাথে? ঃ এখান থেকে একা যাব। সামনের গ্রাম থেকে কাউকে সাথে নিয়ে নেব।' ও ‘চলুন আপনাকে আপনার বাড়ী থেকে বিদায় দেব।'

এর সব কিছু ওর চোখের সামনে ঘুরছিল । চোখে অশ, ঠোটে মৃদু হাসি ঢেলে ৩ বিদায় দিচ্ছিল হামিদকে। নিজের কামরায় এসে সিজদায় পড়ে ও দোয়া করছিল এ। মহান মানুষটির জন্য।

হামিদ বিন জোহরার চলে যাবার পর গ্রানাডায় কয়েক সপ্তাহ রসদ পাঠানাের অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন হাশিম। শীতের শুরুতে বৃষ্টি আর বরফপাতের দরুণ

 


পাহাড়ী পথে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ল। অপরদিকে দুশমনের আকস্মিক হামলার | তীব্রতাও বাড়তে লাগল। তার কাজে অসম্ভব পরিবর্তন দেখতে লাগল আতেকা ।।

এ সময়ে দু’বার বাড়ী এল ওমর। প্রথমবার দু’দিন অবস্থান করেছিল । থানাডার অসহায়তের যে কাহিনী সে বলল, তা ছিল দারুণ হতাশাব্যঞ্জক। দ্বিতীয়বার এসেছিল। রাতে। আতেকা শুনেছিল গ্রানাডার দু’জন কর্তা ব্যক্তি এসেছে তার সাথে ।

গ্রনাড়ার বর্তমান অবস্থা শােনার জন্য ও ছিল পেরেশান। কিন্তু ওমরের সাথে কথা বলার সুযােগ পেলনা। সঙ্গীদের মেহমানখানায় পৌছে দিয়ে ওমর পিতাকে সংবাদ পাঠাল যে, উজিরে আজমের পক্ষ থেকে ওরা জরুরী পয়গাম নিয়ে এসেছে। খবর পেয়ে হাশিম তাড়াতাড়ি মেহমানখানায় চলে গেলেন।

একটু পরে উঠানে দাঁড়িয়ে চাকরদেরকে ওমর বললঃ তাড়াতাড়ি খানা তৈরী কর । ঘােড়াগুলােকেও খাইয়ে দাও। জীন খােলার দরকার নেই। খেয়েই চলে যাব আমরা। আব্বাজানের ঘােড়াও তৈরি কর। তিনিও যাবেন আমাদের সাথে।

চরম উৎকণ্ঠায় চাচীর দিকে তাকিয়ে রইল আতেকা।

ঃ চাচীজান, ওমরের চেহারা বলছে, কোন ভাল খবর নিয়ে সে আসেনি। উজিরে আজমের দূত রাতেই যদি চাচাকে নিয়ে যায়, তার মানে, গ্রানাডায় নিশ্চয়ই কোন কিছু ঘটেছে।

ঃ বেটি, অতটা পেরেশান হয়াে না। ওমরকে তুমি চেন। সব কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ওর স্বভাব। খারাপ কিছু হলে এসেই বাড়ী মাথায় তুলে নিত। তুমি কিছু ভেব না। গুরুত্বপূর্ণ কথা হলে আমায় না বলে তােমার চাচা গ্রানাডা যেতেন না । আমীন ও ওবায়েদের কথাও তাকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি।'

একটু পর একরাশ উদ্বেগ নিয়ে কামরায় ফিরে যাচ্ছিল আতেকা। দোতলায় সিড়ির মুখে দরজা। দরজার দু’কদম নীচে শােবার ঘর আর মেহমানখানার মাঝে চাকরদের। রুমের ছাদ বরাবর ছােট্ট জানালা । জানালার সামনে থামল ও। সন্তর্পণে খুলে ফেলল জানালার ছিটকিনি । ছাদে নেমে এগিয়ে গেল আলতাে পায়ে । ছাদের একপ্রান্ত ঠেকেছে। মেহমানখানার পেছনের লাগােয়া ছােট ঘুলঘুলির সাথে। একটা খােলা। তাতে ভেতরের আবছা আলাে দেখা যাচ্ছিল। দেয়াল পুরু হওয়ায় মেঝেয় দেখা গেল না, শুধু শব্দ শুনতে পেল ও। কেউ বলছিলঃ “দেখুন, ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ না হলে এই রাতে উজিরে আজম আপনাকে তকলীফ দিতেন না। চিঠিতে বিস্তারিত লিখতে পারেননি। পরিস্থিতি কিছুটা হলেওতাে আঁচ করতে পারছেন। গ্রানাডাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাচানাের এই শেষ সুযােগ। এ সুযোগ হারালে ভবিষ্যৎ বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না।

ঃ আবুল কাশিমের হুকুম তামীল করতে তো অস্বীকার করিনি।' হাশিমের কষ্ট। “আমি গ্রানাডা যেতে প্রস্তুত। কিন্তু তিনি যদি চান এ এলাকার সবগুলাে কবিলার পক্ষ থেকে কোন জিম্ম গ্রহণ করি, তবে এলাকার সর্দারদের সাথে আমাকে পরামর্শ করতে

আঁধার রাতের মুসাফির।

 

 

 

 

 


জনাব আপনি পালন করতে পারবেন না এমন কোন দায়িত্ব দিজ্যে ভিন্ন।

-~পনাকে ডেকে পাঠাননি। তিনি শুধু নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ বার চাইছেন। আপনি তার সমর্থন না করলে তাকে তাে আপনার সমছকি বানাস্ত্যে পাবে। আপনার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেন বলেই তিনি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।

ঃ “ঠিক আছে, আমি প্রস্তুত।'

ওমর বললঃ “আব্বাজান, আমার বিশ্বাস ছিল আপনি অস্বীকার করলেন না। আগেই আমি আপনার ঘােড়া তৈরী করতে বলে দিয়েছিলাম।'

ও তােমার ভায়েরা ভাল আছে, একথা বলে তােমার মাকে শান্তনা দাওগে।'

কামরায় পায়ের শব্দ শােনা গেল। তাড়াতাড়ি নিজের কামরার দিকে হাঁটা fun আতেকা। মনের বােঝা অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। ও নিজকে এই বলে শান্তনা দিচ্ছিল যে, উজিরে আজম হয়তাে দুশমনের উপর চরম আঘাত হানবে এজন্য পরামর্শ। চাইছে নেতাদের। কিন্তু ও ভেবে পাচ্ছিল না, মুসার পয়গাম উজিরে আজমের পক্ষ থেকে এল কেন, চাচার গড়িমসিরই বা কারণ কি?

হাশিম গ্রানাডা গেছেন দশদিন পেরিয়ে গেছে। গ্রামের কারো জানা ছিল না কি হচ্ছে ওখানে। এর মধ্যে একবারও গ্রামে আসেনি সাঈদ। মনসুর প্রতিদিন আতেকাদের। ঘরে এলেও তার ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জওয়াব দিতে পারত না। একদিন জোবায়দাকে ডেকে সাঈদ বাড়ী এলেই এখানে পাঠিয়ে দেয়ার তাগিদ দিল আতেকা ।।

দুদিন পর । ফজরের নামাজ শেষ করেছে আতেকা। মনসুর দৌড়ে কামরায় প্রবেশ করে বললঃ “মামা এসেছেন।

ঃ এখন কোথায়?

ও মসজিদে লােকদের সাথে কথা বলছে, এখুনি এখানে আসবে।'

মনসুরের সাথে দ্রুত নীচে নেমে এল আতেকা। বারান্দা থেকে চাচীর কামরায় উকি মেরে দেখল । তিনি কোরান তেলাওয়াত করছিলেন। তাড়াতাড়ি উঠান পেরিয়ে দেউড়ির কাছে গিয়ে সাঈদের অপেক্ষা করতে লাগল। একটু পর সাঈদকে দেখা যেতেই কয়েক পা বাঁয়ে সরে দাঁড়াল আতেকা। সাঈদ কাছে এসে বললঃ ‘গভীর রাতে তােমার খবর পেয়েছি। তুমি খুব পেরেশান। বলতাে কি হয়েছে?

ও ‘তুমি গ্রনাড়া গিয়েছিলে?

ঃ না, সময় পাইনি। আলফাজরাতে খুব ব্যস্ত ছিলাম। ওখানে আমাকে স্বেচ্ছাসেবক ভর্তি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।'

'তুমি কি জান, গ্রানাডায় গুরুতর কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে?

‘আমি শুধু জানি যে, অল্প ক’দিনের মধ্যেই শহর থেকে বেরিয়ে দুশমনকে হামলা করবেন মুসা। এর পর সাগর তীর পর্যন্ত বিজিত এলাকার জনগণ দুশমনের ওপর

‘তুমি কি জান পায়ত্ব দেয়া হয়েছিল।"

হলাম। ওখানে আমাকে

আঁধার রাতের মুসাফির

 

 


ঝাপিয়ে পড়বে। এ

ডরে। গ্রানাডা এখন যে বিপজ্জনক অবস্থায় আছে তাতে ছোটখাট হামলা

এখন আর যথেষ্ট নয়।

তমি না একদিন বলেছিলে আবু আবদুল্লাহ এবং তার মন্ত্রী এ লড়াইয়ের ফলাফতােটা আশাবাদী নয়। সম্ভব হলে ওরাই লড়াই বন্ধ করে দেবে?' , যা গ্রানাডার জনগণও তাই মনে করে। কিন্তু মুসার উপস্থিতিতে তা সম্ভব।

দল

০ ‘তমি কি জান, গত দশদিন থেকে চাচা হাশিম গ্রনাডায় অবস্থান করছেন? ও বাড়ী এসে শুনেছি।'

ও কিন্তু তুমি জান না, উজিরে আজমের আহবানে তিনি গ্রানাডা গিয়েছেন। তার পয়গাম নিয়ে দু'ব্যক্তি এসেছিল । কি এক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছে। ওমরও ছিল তার সাথে।

ও ‘এতে পেরেশানীর কি আছে। তােমার চাচার চিন্তাধারা সিপাহসালারের চেয়ে ভিন্ন নয়। তিনি উজিরে আজমকে কোন ভুল পরামর্শ দিতে পারেন না।

| ‘লড়াইয়ের প্রশ্ন হলে উজিরে আজমের নয়, পয়গাম আসা উচিৎ ছিল মুসার পক্ষ থেকে। আমার সন্দেহ হচ্ছে, মুসার প্রভাব খর্ব করার জন্য সমাজের নেতাদের হাত করতে চাইছে আবুল কাশিম।

ও বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনটি ভাবাও আমাদের অনুচিত। মনে এমন চিন্তা এলেও তােমার চাচার কানে দেয়ার দুঃসাহস বোধহয় দেখাবে না। তোমার চাচার সাথে পরামর্শ করার প্রয়ােজন হয়ত এজন্য যে, পরিস্থিতি তাকে মুসার মন নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। দুশমনকে শেষ আঘাত করার জন্য প্রয়ােজন হয়ে পড়েছে কওমের নেতৃস্থানীয় লোকদের সাহায্য-সহযোগিতা। সন্ধির ব্যাপারে তােমার চাচার সাথে। আলাপ করা যাবে, এতটা সে ভাবতে পারে না।'

ঃ তুমি এখানে থাকলে আমি এত পেরেশান হতাম না। কত কল্পনা এসে বাসা বাধে আমার মনে। কখনাে ভাবি দীর্ঘ লড়াইয়ে হতাশ হয়ে ফৌজের এক অংশ হয়ত কার পক্ষে চলে গেছে। মুসাকে পথ থেকে সরানাের জন্য আবার না জানি কোন ফন্দি।

আটছে ওরা।'

সন্দেহের তো কোন চিকিৎসা নেই।' মৃদু হেসে বলল সাঈদ। তোমার শান্তনার জন্য এদুর বলাই কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার চাচা গ্রানাডা রয়েছেন?

৫ আমি চাচাকে সন্দেহ করছি না। তবে গত ক'হপ্তায় তার কাজে বিরাট পরিবর্তন পথােছ। দাওয়াতের কাজেও ভাটা পড়েছে। লড়াই বাদ দিয়ে তিনি এখন

নিয়েই বেশী ভাবছেন।

লা

ও আতেকা, সব পিতাই তাে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাবে।

* কেউ একটু নিরাশ হলেই তিনি রেগে যেতেন। দুশমনকে ভয় পেত

| ‘প্রথম দিকে কেউ একটু নিরাশ হলে

আঁধার রাতের মুসাফির

 


বলে ওমরের উপর তিনি নারাজ ছিলেন। কিন্তু এখন ওমর তার সামনে মুসার সমালেচিনা করলেও তিনি নীরব থাকেন।

ঃ “তিনি জানেন ওমর বেকুব। ঃ আবুল কাশিমের দূত এসেছে ওমরের সাথে। এ কি কম আশ্চর্যের কথা!

ও আতেকা, যথার্থই তুমি পেরেশান হচ্ছ । কেন বুঝছ না গ্রানাডার কোন দূতকে পথ দেখিয়ে আনার জন্য কাউকে না কাউকে দরকার । নিজের বাড়ীর পথও দেখাতে পারবে না, তােমার চাচার ছেলে অতটা বেকুব নয়।'

হেসে উঠল আতেকা। মন অনেকটা হালকা হল তার । | ঃ ‘চলাে, চাচীকে সালাম করব।' বলেই এগিয়ে গেল সাঈদ।

পরদিন। হাশিম গ্রানাডা থেকে ফিরে এলেন। সংবাদ পেয়েই সাঈদ পৌছল ওখানে। শুয়েছিলেন তিনি। সালমা ও আতেকা তার কাছে বসে ছিল। সাঈদের জন্য চেয়ার ছেড়ে একটু পিছিয়ে গেল আতেকা। বসতে বসতে সাঈদ বললঃ এইমাত্র মনসুর আমায় বলল, আপনি গ্রানাডা থেকে এসেছেন। শুনেই চলে এসেছি। আপনি কখন এলেন?'

ঃ এইতাে কিছুক্ষণ হল। ক্লান্ত স্বরে জওয়াব দিলেন তিনি। ও আপনার শরীর কেমন? ও বড় ক্লান্ত । গ্রানাডায় বিশ্রামের মােটেই সুযােগ পাইনি।' ও অনেক দেরী করে ফিরেছেন । চাচীজান খুব চিন্তা করছিলেন।

ও ‘ভেবেছিলাম দু’দিন থেকেই ফিরে আসব । কিন্তু গ্রানাডার পরিস্থিতি আমাকে থাকতে বাধ্য করেছে। " ঃ চাচীজান বলছিলেন, ওখান থেকে দু’ব্যক্তি এসে হঠাৎ করেই আপনাকে নিয়ে গেছেন।'

ঘাড় বাঁকিয়ে সালমার দিকে তাকালেন হাশিম। আবার সাঈদের দিকে ফিরে বললেনঃ উজিরে আজম আমায় ডেকেছিলেন। দুর্ভিক্ষে গ্রানাডার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ওরা শীতের শেষ পর্যন্ত শহর অবরােধ করে রাখলে হাজার হাজার মানুষ না খেয়েই মরে যাবে । লশকরের ভেতরও জনগণের মত বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। মুসার পরামর্শ অনুযায়ী শহর থেকে বেরিয়ে পূর্ণ শক্তিতে ওদের আক্রমণ করা দরকার। কিন্তু নেতৃবৃন্দ। এর বিরােধিতা করছেন।

ও ‘আপনাকে তাে ডেকে পাঠিয়েছিলেন উজিরে আজম। তিনিও কি মুসার। বিরােধিতা করছেন?

ঃ না, চুড়ান্ত আঘাত হানার পূর্বে দুশমনের জন্য আরাে ক'টা রণক্ষেত্র তৈরী করতে। চাইছেন তিনি। এতে ওরা দুর্বল হয়ে যাবে। তিনি আমায় জিজ্ঞেস করেছেন,

আঁধার রাতের মুসাফির

 


গ্রানাডাবাসীর বোঝা )

করবে

অন্য সব কবিলার জন্য ত৷

এর বােঝা হালকা করার জন্য পাহাড়ী কৰিলাগুলাে কার সযােগিতা স। আমি বলেছি, নিজের এবং প্রতিবেশী কবিগুলোর জিম্মা আমি নিতে পারি ।

কবিলার জন্য তাদের সর্দারদের প্রয়োজন। হুকুমতের দূত এতক্ষণে ওদের

কাছে রওয়ানা হয়ে গেছে।'

০ কিবিলাগুলাে আমাদের কখনো নিরাশ করেনি। এখনো গানাজা সামান্য যা সাহায্য পায় তা ওদেরই ত্যাগের ফলে। মুসার সাথে আপনার দেখহয়েছে?

| ‘হ্যা, তিনি আমাকে বলেছেন, হাতিয়ার ছেড়ে দিলে যে বিপদ আসবে, পানাডাবাসীকে তা জানিয়ে দাও। এজন্যই আমি তাড়াতাড়ি আসতে পারিনি।'

খানিক ভেবে সাঈদ বললঃ যদি মনে কিছু না করেন একটা প্রশ্ন করব।' ঃ বলাে।'

ঃ সুলতান আবু আবদুল্লাহ এবং আবুল কাশিম মুসাকে বাদ দিয়ে তাে আবার কোন বিপজ্জনক ফয়সালা করে বসবে না?'

ও তাদের ব্যাপারে এমনটি কল্পনাও করতে পারি না। তবুও আমার ভয় হচ্ছে, বাইরের বড় ধরনের কোন সাহায্য না পেলে যুদ্ধবিরােধীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে । তােমার আব্বাজানের কোন পয়গাম এখনাে পাইনি। আল্লাহ মালুম কোথায় আছেন তিনি। আমাকে দেখেই মুসা তার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন । তিনি বেঁচে আছেন, ফিরবেন খুব শীঘ্রই এর বেশী তাকে কিছু বলতে পারিনি । বেটা, দোয়া করাে তিনি যেন সফল হন। তুর্কীদের কাছ থেকে কয়েকটা জংগী জাহাজ আনতে পারলে গ্রানাডাবাসীর মধ্যে দেখবে নতুন উদ্দীপনা। তখন দেখবে স্পেনের প্রতিটি মুসলমানের ঘর এক একটা মজবুত কিল্লা। সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি, তার ফেরা পর্যন্ত কওম যেন দুশমনের সামনে টিকে থাকে। কিন্তু কওমের শিরায় আজ আর বেশী খুন নেই।'

ও ‘আপনি হতাশ হবেন না। আমার বিশ্বাস, আব্বাজান খুব শীঘ্রই ফিরে আসবেন। তিনি না আসা পর্যন্ত গ্রানাডাবাসীও লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে।'

ঃ ‘খােদা যেন তােমার আশা পূর্ণ করেন । কওমের ভবিষ্যৎ চিন্তা করলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।

কামরা থেকে বেরিয়ে গেল সাঈদ । উঠানে আতেকা তার অপেক্ষা করছিল। সাঈদ তার কাছে থেমে বললঃ সত্যি বলতাে আতেকা, চাচাকে নিয়ে কি এখনাে তােমার দুশ্চিন্তা।'

|ঃ না, তাকে নিয়ে আর কোন দুশ্চিন্তা নেই। আমিতাে কেবল ওমরকে নিয়েই পেরেশান ছিলাম ।

ও কথাবার্তায় মনে হল গ্রানাডার পরিস্থিতিতে তিনি উৎকণ্ঠিত। এজন্য আজই ওখানে যেতে চাই আমি। জনাপঞ্চাশেক স্বেচ্ছাসেবক খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আজ সন্ধ্যা।

 

 

 


| প্রতিটি ঝােপ আর

নাগাদ এখানে পৌছবে। আমিও যাব তাদের সাথে। ওখানে গিয়েই পরিস্থিতি জানাব।' | কিন্তু গ্রানাডার কোন পথ এখন নিরাপদ নয়।'

‘আমি জানি। কিন্তু এটাও ঠিক, দুশমনের ঝটিকা বাহিনী গত ক'হপ্তায় ক্ষতি স্বীকার করেছে। এখন হাতে এ এলাকায় পা রাখতে ভাববে, প্রতিটি বাে; পাথরের আড়ালে আমাদের লােকজন লুকিয়ে আছে। যে কোন বাকেই হয়ত শুরু

র বা গ্রানাডা সড়কের শেষ ক'মাইল আমাদের জন্য বিপজ্জনক ছিল। সে গত ছেড়ে দিয়েছি। গাড়ীর পরিবর্তে খচ্চরের পিঠে মাল বােঝাই করে এখন সংকীর্ণ পাকা গ্রানাডা যাই, সেখানে দুশমন বাধা দিতে পারে না। কোন পথে রসদ আসছে কখন

সৗছবে ফৌজকে তা জানানাে হয়। শহরের আশপাশে আক্রমণের ভয় হলে কাফেলার হিফাজতের জন্য সিপাইদের পাঠিয়ে দেয়া হয়।'

| 'আমি গ্রানাডার ব্যাপারে দারুণ পেরেশান । আপনি একটু জলদি ফিরে আসার চেষ্টা করবেন।'

আতেকার ধারণা ছিল গ্রানাডার বিপজ্জনক পরিস্থিতি হাশিমকে নিশ্চিন্তে ঘরে বসতে দেবে না। বরং নতুন উদ্যমে পাহাড়ী কবিলাগুলাের কাছে জিহাদের দাওয়াত দেবেন তিনি। কিন্তু জিহাদের দাওয়াত তাে দূরের কথা, ঘর থেকেই বেরুতে চাইতেন না তিনি।

গ্রানাডা সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব শুনে আশপাশের গ্রামের লােকজন আসত তার কাছে। সবাইকে একটা কথাই তিনি বলতেনঃ বুড়ােদের কথার চাইতে গ্রানাডার প্রয়ােজন নওজোয়ানের খুন। তােমরা আরাে রক্ত ঢালতে পারলে এখানে না এসে চলে যাও গ্রানাডা। আর না হয় দোয়া কর, বাইরের কেউ যেন তােমাদের সাহায্যে পৌছে যায় । গ্রানাডার নেতাদের সাথে আমি দেখা করেছি। মুসলিম রাষ্ট্র নেতাদের সাহায্য চাইতে গেছেন হামিদ বিন জোহরা। একথা এখন আর ওদের কাছে গােপন নেই। তিনি সফল হবেন এ আশা নিয়ে ওরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাবে একথা আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি। কিন্তু দুর্ভিক্ষে গ্রানাডার অবস্থা অত্যন্ত কাহিল। এজন্য হামিদ বিন জোহরার তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য দোয়া কর তােমরা। দোয়া কর গ্রানাডার নেতারা যেন এমন কোন ভুল না করে বসেন, যাতে আমাদের পস্তাতে হয়।

হাশিমের স্ত্রী ও চিন্তিত ছিলেন। আতেকাকে তিনি বলতেনঃ ‘বেটি, চাচার জন্য। দোয়া করাে । তিনি কখনাে তাে সাহস হারাদের দলে ছিলেন না। কোন দুশ্চিন্তা হয়তাে তার ভেতরটা কুরে কুরে খাচ্ছে। রাতভর বিছানায় কেবল এপাশ-ওপাশ করেন। অন্ধকারে ঘরময় পায়চারী করেন কখনাে কখনাে।

ঃ ‘চাচীজান’, শান্তনার স্বরে বলতাে আতেকা। কওমের প্রত্যেক কল্যাণকামা ব্যক্তিই এখন উৎকণ্ঠিত। যারা আজাদীর বিনিময়ে শান্তি চায়, গ্রানাডায় থাকার সময়

 

 

 


| প্রতিটি ঝােপ আর

নাগাদ এখানে পৌছবে। আমিও যাব তাদের সাথে। ওখানে গিয়েই পরিস্থিতি জানাব।' | কিন্তু গ্রানাডার কোন পথ এখন নিরাপদ নয়।'

‘আমি জানি। কিন্তু এটাও ঠিক, দুশমনের ঝটিকা বাহিনী গত ক'হপ্তায় ক্ষতি স্বীকার করেছে। এখন হাতে এ এলাকায় পা রাখতে ভাববে, প্রতিটি বাে; পাথরের আড়ালে আমাদের লােকজন লুকিয়ে আছে। যে কোন বাকেই হয়ত শুরু

র বা গ্রানাডা সড়কের শেষ ক'মাইল আমাদের জন্য বিপজ্জনক ছিল। সে গত ছেড়ে দিয়েছি। গাড়ীর পরিবর্তে খচ্চরের পিঠে মাল বােঝাই করে এখন সংকীর্ণ পাকা গ্রানাডা যাই, সেখানে দুশমন বাধা দিতে পারে না। কোন পথে রসদ আসছে কখন

সৗছবে ফৌজকে তা জানানাে হয়। শহরের আশপাশে আক্রমণের ভয় হলে কাফেলার হিফাজতের জন্য সিপাইদের পাঠিয়ে দেয়া হয়।'

| 'আমি গ্রানাডার ব্যাপারে দারুণ পেরেশান । আপনি একটু জলদি ফিরে আসার চেষ্টা করবেন।'

আতেকার ধারণা ছিল গ্রানাডার বিপজ্জনক পরিস্থিতি হাশিমকে নিশ্চিন্তে ঘরে বসতে দেবে না। বরং নতুন উদ্যমে পাহাড়ী কবিলাগুলাের কাছে জিহাদের দাওয়াত দেবেন তিনি। কিন্তু জিহাদের দাওয়াত তাে দূরের কথা, ঘর থেকেই বেরুতে চাইতেন না তিনি।

গ্রানাডা সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব শুনে আশপাশের গ্রামের লােকজন আসত তার কাছে। সবাইকে একটা কথাই তিনি বলতেনঃ বুড়ােদের কথার চাইতে গ্রানাডার প্রয়ােজন নওজোয়ানের খুন। তােমরা আরাে রক্ত ঢালতে পারলে এখানে না এসে চলে যাও গ্রানাডা। আর না হয় দোয়া কর, বাইরের কেউ যেন তােমাদের সাহায্যে পৌছে যায় । গ্রানাডার নেতাদের সাথে আমি দেখা করেছি। মুসলিম রাষ্ট্র নেতাদের সাহায্য চাইতে গেছেন হামিদ বিন জোহরা। একথা এখন আর ওদের কাছে গােপন নেই। তিনি সফল হবেন এ আশা নিয়ে ওরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাবে একথা আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি। কিন্তু দুর্ভিক্ষে গ্রানাডার অবস্থা অত্যন্ত কাহিল। এজন্য হামিদ বিন জোহরার তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য দোয়া কর তােমরা। দোয়া কর গ্রানাডার নেতারা যেন এমন কোন ভুল না করে বসেন, যাতে আমাদের পস্তাতে হয়।

হাশিমের স্ত্রী ও চিন্তিত ছিলেন। আতেকাকে তিনি বলতেনঃ ‘বেটি, চাচার জন্য। দোয়া করাে । তিনি কখনাে তাে সাহস হারাদের দলে ছিলেন না। কোন দুশ্চিন্তা হয়তাে তার ভেতরটা কুরে কুরে খাচ্ছে। রাতভর বিছানায় কেবল এপাশ-ওপাশ করেন। অন্ধকারে ঘরময় পায়চারী করেন কখনাে কখনাে।

ঃ ‘চাচীজান’, শান্তনার স্বরে বলতাে আতেকা। কওমের প্রত্যেক কল্যাণকামা ব্যক্তিই এখন উৎকণ্ঠিত। যারা আজাদীর বিনিময়ে শান্তি চায়, গ্রানাডায় থাকার সময়।

 

 

 

 


তাদের কারাে কথায় চা

কারাে কথায় চাচা হয়তাে ব্যথা পেয়েছেন। সাঈদের আবার কোন খবর নেই।

উদ্বেগের এও একটা কারণ। আমার বিশ্বাস, তিনি কোন সুখবর নিয়ে এলে চাচাজান আবার সাহস ফিরে পাবেন।

খানাডায় যাবার এক সপ্তাহ পরও কোন সংবাদ পাঠায়নি সাঈদ। একদিন সাকে তাে ছড়িয়ে পড়ল নানান গুজব। কেউ বলছিলঃ ‘আৰু আবদুল্লাহর দরবার থেকে নিরাশ

একাই শত্রুকে হামলা করেছিলেন তিনি। দুশমনের ব্যুহ চিরে চিরে চিরদিনের জন্য হয়ে গেছেন। কেউ আবার বলছিলঃ 'দু’হাতে দুশমন হত্যা করতে করতে নদী পারে। চ ছিলেন মুসা। মারাত্মক আহত অবস্থায় ঘােড়াসহ লাফিয়ে পড়েছিলেন নদীতে।

আরে তার লাশ আর ভেসে উঠেনি। অনেকে বলছিলঃ একাকী দুশমনের সাথে এডতে লড়তে তিনি পাহাড়ে চলে গেছেন। পাহাড়ী কবিলাগুলাের ফৌজ নিয়ে ফিরে

আসবেন আবার।'

কিন্তু পরদিন সারা গায়ে খবর রটল দুশমনের দেয়া সন্ধির সব শর্ত আবু আবদুল্লাহ মেনে নিয়েছে। এর তিনদিন পর ঘােড়া ছুটিয়ে সােজা হাশিমের ঘরে এল সাঈদ। উঠানে রােদ পােহাচ্ছিলেন হাশিম। পাশে বসেছিলেন সালমা। ঘােড়া থেকে নেমে এগিয়ে এল সাঈদ। হাশিম উঠে বসলেন। নীরবে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ । ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরছিল সাঈদের দু'চোখ বেয়ে । অসহায়ের মত দৃষ্টি নামিয়ে আনলেন হাশিম।

ঃ বসাে, বাবা। সালমা বললেন।

হাশিমের পাশে বসল ও। সালমার এতীম ভাতিজী খালেদা। পাঁচ বছরের শিশু। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আতেকাকে ডাকছিলঃ আপা তিনি এসেছেন। মনসুরের মামা এসেছেন আপা।

কক্ষ থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এল আতেকা। ওদের কাছে এসে থামল । কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো লাল করে ফেলেছিল ও। ফ্যাকাশে চেহারা।

সালমার হাতের ইশারায় তার কাছে বসল সে। নিঃশব্দে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল ওরা। |ঃ সাঈদ, কি হবে এখন?' ধরা গলায় সালমা প্রশ্ন করল।

ও ‘চাচীজান, আমার মনে হয় কওমের ইচ্ছে করার স্বাধীনতাও ছিনিয়ে নেয়া। হয়েছে। আগামী দিনের প্রতিটি প্রশ্নের জওয়াব খুঁজতে হবে দুশমনের চেহারায়।

ঃ মুসা শহীদ হয়েছেন, তােমার কি বিশ্বাস হয়?' | ‘হ্যা, তার শূন্য ঘােড়া দুশমনরা শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাকে ঘুরানাে হয়েছে। শহরের অলিগলিতে। একটা ভীতির ছায়া পড়েছে শহরে। হুকুমত শহরের জনগণকে বােঝাচ্ছে যে, সুলতান মাত্র সত্তর দিন লড়াই বন্ধ রাখার চুক্তি করেছেন। এ সময়ের মধ্যে বাইরের কোন সাহায্য পৌছে গেলে আবার লড়াই শুরু হবে।'

 

 

 

         


র সম্ভাবনা থাকলে মুসা রন্তর দিন পর গ্রানাতাবাসী

মতোন আবু আবদুল্লাহ এবং

হাশিম বললেনঃ ‘সত্তর দিন পর আবার লড়াই শুরু হবার সম্ভাবনা এ নিরাশ হতেন না। ফার্ডিনেন্ড বােকা নন। তিনি জানেন, সত্তর দিন পর দ্বিতীয়বার আর তরবারী ধরতে পারবে না।'

সংকোচ জড়ানাে কষ্ঠে হাশিমকে সাঈদ প্রশ্ন করলঃ সুলতান আর অবদের আবল কাশিম হাতিয়ার সমর্পণের ফয়সালা করেছেন, তা কি আগে থেকে জানতেন?

ও না, আমি শুধু এদুর জানতাম, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার শক্তি শেষ হয়ে গেr> আবু আবদুল্লাহর। আবুল কাশিমের হাত এতটা শক্ত নয় যে নিজের মর্জি মত লা৯ে চালাবে। আবু আবদুল্লাহর দরবারে বিরােধীদের সংখ্যা বেশী হওয়ায় যদি তিনি কে ভল ফয়সালা করে থাকেন, তবে এক উজিরের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে আবুল কাল বিরােধিতা করবেন না।

| তার সাথে যখন দেখা হয়েছে, নিরাশ মনে হল তাকে। আমাকে বলেছিলেন। ‘মুসার দৃঢ় হিম্মত এবং দুরন্ত সাহস সত্ত্বেও সত্য থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। সন্ধি প্রিয় ওলামা এবং ওমরা ছাড়াও ফৌজি অফিসাররা এ লড়াইর পরিণতি সম্পর্কে নিরাশ । ভয় হয়, বাদশাহ সালামত আবার এ হুকুম আমায় না দিয়ে বসেন যে, যে কোন কোন মুল্যে আমাদের সন্ধি করা উচিৎ।

ও সন্ধি প্রিয়রা আবুল কাশিমের সমর্থন লাভ করেছিল, এ ব্যাপারে মুসার সাথেও তিক্ত হয়ে গিয়েছিল তার সম্পর্ক । গ্রানাডার ঘরে ঘরে এমন কথা আলােচনা হচ্ছে।

ঃ না, এখনাে ভেতরের ব্যাপারটা জনগণ জানে না। আসল কথা হচ্ছে, দেরী না করেই শহর থেকে বেরিয়ে পূর্ণ শক্তিতে হামলা করতে চাইছিলেন মুসা। সে মনে করেছিল, এ পরিস্থিতিতে গ্রানাডার নেতারা এর বিরােধিতা করবে না। এ জন্যই নেতাদের আলহামরায় জমায়েত করার পরামর্শ তিনি আবু আবদুল্লাহকে দিয়েছিলেন, যাতে চুড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তাদের সহযােগিতা পাওয়া যায় । কিন্তু আবুল কাশিমের ভয় ছিল, প্রভাবশালী ওমরা এবং ওলামারা এর বিরােধিতা করবে।

মুসাকে আবুল কাশিম বলেছিলেন, ভর জলসায় আপনার পরামর্শ নাকচ করা হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে জনগণের ওপর। এজন্য খােলা দরবারে এ পরামর্শ না | তুলে নিশ্চিন্ত থাকুন যে, আপনার পক্ষেই সমর্থন বেশী থাকৰে। গ্রানাডাবাসী ময়দানে। একা থাকবে না, আপনি যদি হতাশাগ্রস্তদের এ আশ্বাস দিতে পারেন তবেই তা সম্ভব।

| কিন্তু থানাডার নেতাদের সম্পর্কে মুসার ধারণা ছিল ভুল। গ্রানাডা থেকে ফেরার পর আমি কেন এত পেরেশান, এ প্রশ্ন করেছিলে। তখন পাশ কাটানাের চেষ্টা করেছি । এখন তােমাদের তা বলতে পারব । আমার আশংকা ছিল, ভর জলসায় এ প্রসংগ তুললে, বেশীর ভাগ লােকই মুসাকে সমর্থন করবে না। মুসা খুব তাড়াহুড়া করছিলেন একথা আমি বলছি না। কারণ, গ্রানাড়ার পরিস্থিতিই তাকে তাড়াহুড়া করতে বাধ্য করছিল।

 

তার কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দৃঢ়তাকে সম্মান দেখিয়েও বলি, আমার ভয় হচ্ছিল, নাভাবাসী এ ব্যক্তিত্বের সাহসের সম্মান রাখবে না।

আবুল কাশিমকে গালি দিয়ে লাভ নেই। যে হুকুমত জাতির জন্য অভিশাপ, তিনি তকমতের উজীর মাত্র। এখন তারা শেষ চেষ্টা হবে চুক্তি সময়ের মধ্যে বেশী করে আ লাভ করা। এর পর যদি আমাদের ভাগ্যে গােলামী লেখা না হয়ে থাকে, লাহর কোন বান্দা হয়ত আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু এ মুহূর্তে যুদ্ধের আরবতে বুদ্ধি দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

এখন গ্রানাডাবাসীর ফয়সালা বদলানাের সাধ্য আমার নেই । আশানুরূপ কোন নেয়া সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এমন কিছু করা উচিৎ নয় যাতে দুশমন এ এলাকা আক্রমণের বাহানা পেয়ে যায়। তুমি হামিদ বিন জোহরার সন্তান। তােমার যথেষ্ট। সাবধান হওয়া উচিৎ। তােমার হেফাজত করা আমার বড় দায়িত্ব। কথা দাও, চুক্তির এ দিনগুলােতে অসাবধান লােক থেকে দূরে থাকবে।

| যে কোন মুহূর্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়ার মত লােকের অভাব গ্রানাডায় নেই। এরা তােমার কাছে এলে মনে রেখ, তাদের সাথে দুশমনের গােয়েন্দা থাকতে পারে। আমার বিশ্বাস, এখন রসদের অভাব হবে না। তুমি না হলেও সে কাজ চলবে। একান্তই যদি যেতে চাও, আমিন ও ওবায়েদ ছাড়া অন্য কারাে কাছে থাকবে না।

আমি এখনাে তােমার পিতার অপেক্ষা করছি। এখনাে আশায় আছি, মৃতপ্রায়। কওমের জন্য জিন্দেগীর নতুন পয়গাম নিয়ে তিনি আসবেন। কিন্তু কোন আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত, নীরবে নিশ্চিন্তে অনাগত পরীক্ষার প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।

ঃ ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন চাচাজান, আমি অসাবধান হব না। আমার মনে হয় এখন। আপনার গ্রানাডা থাকা উচিৎ। ওখানকার স্বাধীনতাপ্রিয়দের আপনার পরামর্শের প্রয়ােজন।'

ঃ এখন আমার পরামর্শে কোন ফায়দা হবে মনে হয় না। তবুও আমি দু'তিন দিনের মধ্যেই থানাডা রওনা করব। অবশ্য ফিরেও আসব তাড়াতাড়ি। কোন কারণে আমার দেরী হলে যদি তােমার আব্বার কোন পয়গাম এসে যায়, কাউকে বলবে না। তিনি নিজে এলেও কিছু করার পূর্বে যেন আমার সাথে পরামর্শ করেন। তার আসার সংবাদ পেলেই আমি পৌছে যাব । পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে তিনি নিজেই বুঝতে পারবেন, ওদের দৃষ্টিকে ফাকি দিয়ে এখন কাজ করতে হবে।'

চারদিন পর । গ্রানাডা চলে গেছেন হাশিম । থানাডা থেকে তিনজন ফৌজি কর্মচারী। দুটিতে বাড়ী এসেছিল। ওরা বললঃ থানাডার বিভিন্ন স্থানে সন্ধির এবং আবু আবদলাহর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হচ্ছে। পরের সপ্তায় এক বিক্ষোভ মিছিল এগিয়ে গেল। আলহামরার দিকে। মছিল ছত্রভঙ্গ করার জন্য সেনাবাহিনীকে ময়দানে আসতে হল।।

 


ফার্ডিনেন্ড এ অবস্থায় অত্যন্ত চিন্তিত, এমন খবর শহরে শর্তানুযায়ী জামানত হিসেবে যাদের সেন্টাফে পাঠার তor. পাঠাতে আবু আবদুল্লাহকে চাপ দিচ্ছেন ফার্ডিনেন্ড।  ভe মানবেন না।

= চিন্তিত, এমন খবর শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। চুক্তির। ভর সেন্টাফে পাঠানাের কথা, খুব শীগগীরই তাদের * দিচ্ছেন ফার্ডিনেন্ড ।নয়তো তিনি যুদ্ধ বিরতি চুক্তি

কারো মতে সাধর সমথকরা দ্বিতীয়বার যুদ্ধ শুরু করার মন

ও মাহছে। ওরা আবু আবদুল্লাহকে পরামর্শ দিচ্ছে যাতে সম্ভাবনা আছে, ওদের জামানত হিসেবে সেন্টাফে পাঠিয়ে দেয়া হােক। এ আবদুল্লাহও এর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।'

খবর শুনেই হাশিমের ঘরে এল সাঈদ। আতেকাকে ও বললঃ এ সংবাদ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তবুও আমি গ্রানাডা যেতে চাই। হাশিম চাচাকেও খুঁজে বের করা দরকার। অনেক দিন হল তিনি গিয়েছেন । গায়ের চার ব্যক্তি যাবে আমার সাথে। একটু পরই আমরা রওয়ানা করব।

আতেকা এবং তার চাচী ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিদায় দিল তাকে। খানিক পর দ্রুতগামী পাচটি ঘােড়া গ্রানাডার পথ ধরল।

দু’দিন হল সাঈদ গিয়েছে। হাশিম ফিরে এসে ক্লান্তিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন।

একটু পর সালমাকে তিনি বললেনঃ ‘বিবি, এতদিন পর্যন্ত আশা ছিল জামানত হিসেবে যাদের পাঠান হচ্ছে আমীন ও ওবায়েদকে তাদের লিষ্ট থেকে বাদ দেবেন আবল কাশিম । কিন্তু এতে সুলতান দস্তখত করে ফেলেছেন। এক কপি পাঠিয়ে দেয়া। হয়েছে ফার্ডিনেন্ডের কাছে। যে কোন মুহূর্তে ওদের সেন্টাফে পাঠিয়ে দেয়া হবে।'

অশ্রু মুছতে মুছতে সালমা বললেনঃ “কিন্তু আবুল কাশিম তাে আপনার দোস্ত।

ঃ আবুল কাশিমের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযােগ নেই। সম্ভব হলে তিনি আমার সাহায্য করতেন। সিপাহসালারের যুক্তি হচ্ছে, ফৌজকে শান্ত রাখতে হলে আমীন ও ওবায়েদের মত অফিসারকে জামানত হিসেবে পাঠানাে দরকার। এরপরও আবুল কাশিম আমায় কথা দিয়েছেন, অল্প ক'দিনের মধ্যেই ওদের ছাড়িয়ে আনবেন। সাহস হারিয়ো না সালমা। সন্তানদের চেয়ে এ গ্রামটাকে রক্ষা করাই আমার সামনে বড় সমস্যা ছিল । ফার্ডিনেন্ড আমাকে দুশমন আর সুলতানকে বিদ্রোহী ভেবে এ এলাকায় ফৌজ পাঠাক তা আমি চাইনি, যাতে হাজারো  মানুষের হত্যার অপরাধ আমার ঘাড়ে পড়বে। | যে চারশাে জনকে ফার্ডিনেন্ডের ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে ওরা কয়েদী নয়, মেহমানের ব্যবহারই পাবে। শুধু ভবিষ্যতের আশার সব প্রদীপ নিভে গেছে, এটাই। আমার দুঃখ।

বেদনা ভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে চাচার দিকে তাকিয়েছিল আতেকা। ধরা আওয়াজে ও

 


বললঃ সাঈদ আপনাকে খুজতে গ্রানাডা গিয়েছিল। আপনার সাথে দেখা করেনি?'

| ‘হ্যা, দেখা করেছিল। আমি সাথে আনতে চাইছিলাম । কিন্তু ওর জরুরী কিছু কাজ থাকায় আমার সাথে আসেনি। আমার বিশ্বাস ও কোন বিপজ্জনক পথে যাবে না। ফিরে আসবে খুব শীঘ্র।

নহরের ওপারে সে বাড়ীটায় আটকে ছিল আতেকার দৃষ্টি, সময়ের আঁধার ঘুর্ণিতে যেখানে ও এখনাে দেখছিল আশার ক্ষীণ আলাের ছটা।

‘আতেকা, সিঁড়ি থেকে চাচীর কণ্ঠস্বর ভেসে এল। আতেকা, বেটি, এখনাে তুমি। দাড়িয়ে আছ। বেটি, খুব ঠান্ডা পড়ছে।

ঃ “আসছি চাচীজান। বেদনামাখা কণ্ঠে জওয়াব দিল ও।

 


No comments

Powered by Blogger.