মাযহাব কি কেন?
তাকলীদের হাকীকত
মুসলিম হিসাবে আমাদের অন্তরে এ নিষ্কম্প বিশ্বাস অবশ্যই থাকতে হবে
যে, পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনের মাধ্যমে লা-শারীক আল্লাহর একক ও নিরংকুশ আনুগত্যই হলো ইসলামের মূল কথা- তাওহীদের সারনির্যাস। এমন কি স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যও এজন্য অপরিহার্য
যে, আসমানী ওয়াহীর তিনি সর্বশেষ অবতরণ ক্ষেত্র এবং তাঁর জীবনের প্রতিটি ‘আচরণ ও উচ্চারণ শরীয়তে ইলাহীয়ারই প্রতিবিম্ব।
সুতরাং দ্বীন ও শরীয়তের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলেরই আনুগত্য করে যেতে হবে সমর্পিতচিত্তে;
এখলাস ও একনিষ্ঠার সাথে। তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে এ আনুগত্যের সামান্যতম হকদার মনে করারই। অপর নাম হলো শিরক। অন্য কথায় হালাল-হারাম সহ শরীয়তের যাবতীয় আহকাম ও বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহই হলো মাপকাঠি। আর এ দু’য়ের একক আনুগত্যই হলা ঈমান ও তাওহীদের দাবী।
এ বিষয়ে ভিন্নমতের কোনও অবকাশ নেই। তবে একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে,
কোরআন ও সুন্নায় বর্ণিত আহকাম দুধরনের। কিছু আহকাম যাবতীয় অস্পষ্টতা,
সংক্ষিপ্ততা,
বাহ্যবিরোধ মুক্ত এবং সে গুলোর উদ্দেশ্য ও মর্ম এতই স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট যে,
বিশিষ্ট সাধারণ সকলের পক্ষেই নিঝন্ঝাটে তা অনুধাবন করা সম্ভব। যেমন কোরআনুল কারীমের ইরশাদ
ولاينتب تک با (سورة الحجرات)
তোমাদের কেউ যেন কারো গীবতে লিপ্ত না হয়।
আরবী জানা যে কেউ অনায়াসে এ আয়াতের মর্ম অনুধাবন করতে পারে। কেননা এখানে যেমন কোন অস্পষ্টতা ও সংক্ষিপ্ততা নেই তেমনি নেই কোরআন ও সুন্নাহর অন্য কোন নির্দেশের সাথে এর বাহবিরোধ।
অনুরূপভাবে হাদীসে রাসূলের ইরশাদ- ax2434 ;
আরব অনারবের মাঝে তাকওয়া ছাড়া শ্রেষ্ঠত্বের আর কোন ভিত্তি নেই।
অস্পষ্টতা ও জটিলতামুক্ত এ হাদীসের বাণী ও মর্ম অনুধাবন করা আরবী জানা যে কারো জন্যই সহজসাধ্য।
পক্ষান্তরে সকলের পক্ষে অনুধাবন করা অসম্ভব,
এমন আহকামের সংখ্যাও কোরআন সুন্নায় কম নয়। সংক্ষিপ্ত ও দ্ব্যর্থবোধক উপস্থাপনা কিংবা আয়াত ও হাদীসের দৃশ্যতঃ বৈপরিত্যের কারণে এ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন কোরআনুল কারীমের ইরশাদبأنه لة قوالتي
তালাকপ্রাপ্তার তিন ‘কুরু পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে।
| তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দতের সময়সীমা নির্দেশ প্রসংগে এখানে ১e
শব্দটির ব্যবহার এসেছে। কিন্তু মুশকিল হলো;
আরবী ভাষায় হায়েয ও তোহর উভয় অর্থে আলোচ্য শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। সুতরাং প্রথম অর্থে ইদ্দতের সময়সীমা হবে তিন হায়েয। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় অর্থে সে সময়সীমা দাঁড়াবে তিন তোহর। বলাবাহুল্য যে,
৮০ শব্দের দ্ব্যর্থতাই এ জটিলতার কারণ। কিন্তু প্রশ্ন হলাে;
এ দুই বিপীরত অর্থের কোনটি আমরা উম্মী লোকেরা গ্রহণ করবো?
১। হায়েয অর্থ স্ত্রী লোকের মাসিক ঋতুস্রাব। শরীয়তের দৃষ্টিতে হায়েযের সর্বনিম্ন সীমা তিনদিন ও সর্বোচ্চ সীমা দশ দিন। তিন দিনের কম ও দশ দিনের অধিক রক্ত দেখা দিলে সেটা হায়েয নয়। ফিকাহর পরিভাষায় সেটা ইসতিহাযাহ। হায়েযের সময় সালাত মাওকুফ ও সিয়াম স্থগিত থাকে। কিন্তু ইসতিহাযার সময় সালাত,
সিয়াম সবই স্বাভাবিক নিয়মে করে যেতে হয়। তোহর অর্থ দুই সাবের মধ্যবর্তী সময়। শরীয়তের দৃষ্টিতে তোহরের সর্বনিম্ন সীমা পনের দিন। অর্থাৎ একবার হায়েয হওয়ার পর পনের দিনের কম সময়ে দ্বিতীয় হায়েয হতে পারে না। এ সময়ে রক্ত দেখা দিলে সেটা ইসতিহাযাহ হবে। তোহরের সর্বোচ্চ কোন সময়সীমা নেই। অর্থাৎ রোগ বা অন্য কোন কারণে এক হায়েযের পর দু,
তিন,
চার,
পাঁচ বা অন্য কোন কারণে এক হায়েযের পর দু,
তিন,
চার,
পাঁচ মাস এমনকি আরো বিলম্বে পরবর্তী হায়েয হতে পারে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আরোচনা ফিকাহ গ্রন্থে দেখুন।
মাযহাব কি ও কেন?
তদুপ হাদীসে রাসূলের ইরশাদ
من لميتك الخاب تلون بحرب من اللو سره
বর্গা ব্যবস্থা যে পরিহার করে না তাকে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার ঝুঁকি নিতে হবে।
আলোচ্য হাদীস কঠোর ভাষায় বর্গা প্রথা নিষিদ্ধ করলেও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনার কারণে এটা অস্পষ্ট যে,
বর্গা প্রথার সব ক'টি পদ্ধতিই নিষিদ্ধ না বিশেষ কোন পদ্ধতি উক্ত নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত?
এ প্রশ্নের সমাধান পেতে রীতিমত গবেষণার প্রয়োজন।
| আরেকটি উদাহরণ হলো,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইরশাদ
من كان له امام فقراء الإمام له قراءة
ইমামের কিরাত মুকতাদীর ক্বিরাতরূপে গণ্য হবে।
এ হাদীস দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে,
ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কিরাত পড়া কিছুতেই চলবে না। অথচ অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে
لاصلاة لمن لم ي ايناتحة الكتاب (بخاری)
সূরাতুল ফাতেহা যে পড়েনি তার নামাজ শুদ্ধ হয়নি।
| এ হাদীসের আলোকে ইমাম মুক্তাদী উভয়ের জন্যই সূরাতুল ফাতিহা বাধ্যতামূলক। হাদীসদ্বয়ের এ দৃশ্যতঃ বিরোধ নিরসনকল্পে প্রথম হাদীসকে মূল ধরে দ্বিতীয়টির ব্যাখ্যায় বলা যায় যে,
এ হাদীসের লক্ষ্য ইমাম ও মুনফারিদ,
মুক্তাদী নয়। সুতরাং ইমাম ও মুনফারিদের জন্য সূরাতুল ফাতিহা বাধ্যতামূলক। হলেও মুক্তাদীর জন্য তা নিষিদ্ধ। কেননা,
ইমামের কিরাত মুক্তাদীর কিরাত বলে গণ্য হবে।
মাযহাব কি ও কেন?
আবার দ্বিতীয় হাদীসকে মূল ধরে প্রথমটির এরূপ ব্যাখ্যা হতে পারে যে,
এখানে
| এর অর্থ হলো 'সুরাতুল ফাতিহার সাথে অন্য সূরা যোগ করা। অর্থাৎ
(দ্বিতীয় হাদীসের আলোকে ইমাম,
মুনফারিদ ও মুক্তাদী)
সবার জন্য সূরাতুল ফাতিহা বাধ্যতামূলক হলেও অন্য সূরা যোগ করার ক্ষেত্রে মুক্তাদীর জন্য ইমামের কিরাতই যথেষ্ট। এখন প্রশ্ন হলো;
এ ব্যাখ্যাদ্বয়ের কোনটি আমরা গ্রহণ করবো?
এবং কোন যুক্তিতে একটি ব্যাখ্যা পাশকেটে অন্যটিকে প্রাধান্য দিবো
কোরআন-সুন্নাহ থেকে আহকাম ও বিধান আহরণের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিলে সমাধান কল্পে আমরা দুটি পন্থা অনুসরণ করতে পারি। অর্থাৎ নিজেদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর ভরসা করে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা প্রথম জামানার মহান পূর্বসূরীগণের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করে তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ।।
ইনসাফের দৃষ্টিতে আমাদের দ্ব্যর্থহীন ফয়সালা এই যে,
প্রথম পন্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিবহুল ও বিপদসংকুল।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি হলাে বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ। এটা অতিরিক্ত বিনয় কিংবা হীনমন্যতা নয়;
বাস্তব সত্যের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি মাত্র। কেননা ইলম ও হিকমত,
জ্ঞান ও প্রজ্ঞা,
মেধা ও স্মৃতি শক্তি,
ন্যায় ও ধার্মিকতা এবং তাকওয়া ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে আমাদের দৈন্য ও নিঃশ্বতা এতই প্রকট যে,
খায়রুল কুরুন তথা তিন কল্যাণ যুগের আলিম ও ওয়ারিসে নবীগণের সাথে নিজেদের তুলনা করতে যাওয়াও এক নগ্ন নির্লজ্জতা ছাড়া কিছু নয়। তদুপরি খায়রুল কুরুনের মহান আলিমগণ ছিলেন পবিত্র কোরআন অবতরণের সময় ও পরিবেশের নিকটতম প্রতিবেশী। এ নৈকট্যের সুবাদে কোরআন সুন্নাহর মর্ম অনুধাবন ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ তাদের জন্য ছিলো সহজ ও স্বচ্ছন্দপূর্ণ। পক্ষান্তরে নবুওতের পূন্যত’
যুগ থেকে সময়ের এত সূদীর্ঘ ব্যবধানে আমরা দুনিয়ায় এসেছি যে,
কোরআন সুন্নাহর পটভূমি,
পরিবেশ এবং সে যুগের সামাজিক রীতি-নীতি,
আচার-আচরণ ও বাধারা সম্পর্কে নিখুত,
নির্ভূল ও স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব না হলেও কষ্ট সাধ্য এবং পদস্থলনের আশংকা পূর্ণ অবশ্যই। অথচ সঠিক অনুধাবনের জন্য এটা একান্ত অপরিহার্য।
এ সকল কারণে জটিল ও সূক্ষ্ম আহকামের ক্ষেত্রে নিজেদের ইলম ও প্রজ্ঞার উপর ভরসা না করে খায়রুল কুরুনের মহান পুর্বসূরী আলিমগণের উপস্থাপিত ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সে মোতাবেক আমল করাই হলো নিরাপদ ও যুক্তিসম্মত। আর এটাই তাকলীদের খােলাসা কথা।
আমি আমার বক্তব্য পরিবেশনে ভুল না করে থাকলে এটা নিশ্চয় প্রমাণিত হয়েছে যে,
দ্ব্যর্থতা,
সংক্ষিপ্ততা কিংবা দৃশ্যতঃ বৈপরিত্যের কারণে কোরআন সুন্নাহ থেকে আহকাম ও বিধান আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিলেই শুধু ইমাম ও মুজতাহিদের তাকলীদ প্রয়োজন । পক্ষান্তরে সহজ ও সাধারণ আহকামের ক্ষেত্রে তাকলীদের বিন্দু মাত্র প্রয়ােজন নেই। সুপ্রদ্ধি হানাফী আলিম আব্দুল গণী লাবলুসী
(রাঃ)
লিখেছেন
يد العون الين بالولايحتاج الآمالم إلى القلينيه لاحد الا بة گ ية القوة والمد
برب
و
النا و
اللواط الكرة
التي ځوها
امي والقتل
والرقة والضب
وما اشبه
لكو الآن
تلفن های تحتاج إلى اللونيه.
সুস্পষ্ট ও সর্বসম্মত আহকাম ও মাসায়েলের ক্ষেত্রে চার ইমামের কারো তাকলীদের প্রয়োজন নেই। যেমন,
সালাত,
সিয়াম,
জাকাত ও হজ্জ ইত্যাদি ফরজ হওয়া এবং জিনা,
সমকামিতা,
মদ্যপান,
চুরি,
হত্যা,
লুণ্ঠন ইত্যাদি হারাম হওয়া দ্ব্যর্থহীন ও সুস্পষ্ট আয়াত দ্বারা সুপ্রমাণিত। সুতরাং এ বিষয়ে কারো তাকলীদের প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে ভিন্নমতসম্বলিত আহকাম ও মাসায়েলের ক্ষেত্রেই শুধু তাকলীদের প্রয়োজন।
আল্লামা খতীব বোগদাদী
(রঃ)
লিখেছেন
و
الصلوة الخمس
من
دين الل
صلی الله
عليه
ب الكرة وصوم شهر رمضان والحج وتحريم النا ر
اللبنه لإت الكم وما أشبه ذيك هالات الناس كلهم ي گون في ادراكم واليم به، لا منی يللي فيه، ضري الام
الأبالى والإستدلاليگ
غيل من الأحكام البادات والاملاير المالاگا
بدليل قول الله تعالى قاشت نذار فيه النيل
و تاكوتا اليد في فيه أهل القران كه ت
احي آن یع
ع النني لا ختا المسائل التي هي من
و ذلك في إجاب لك قط عن المعاش وهلاك الك
:
ي جب أن لا
শরীয়তের আহকাম দু'
ধরনের। অধিকাংশ আহকামই দ্বীনের অংশরূপে সাধারণভাবে স্বীকৃত। যেমন;
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত,
রমজানের সিয়াম,
যাকাত ও হজ্জ ইত্যাদির ফরজিয়ত বা অপরিহার্যতা এবং যিনা,
মদ্যপান ইত্যাদির হুরমত ও নিষিদ্ধতা। এ সকল ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ বৈধ নয়। কেননা এগুলো সবার জন্য সমান বােধগম্য। পক্ষান্তরে ইবাদত,
মুয়ামালাত,
ও বিয়ে-শাদীর খুঁটিনাটি মাসায়েলের ক্ষেত্রে রীতিমত বিচার গবেষণা প্রয়োজন বিধায় তাকলীদ অপরিহার্য। ইরশাদ হয়েছে-
“তোমাদের ইলম না থাকলে আহলে ইলমদের জিজ্ঞাসা করে নাও।”
তদুপরি এ সকল ক্ষেত্রে তাকলীদ নিষিদ্ধ হলে সবাইকে বাধ্যতামূলক ইলম চর্চায় নিয়োজিত হতে হবে। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাত্রাই অচল হয়ে যাবে। আর খেত-খামার,
ব্যবসা-বাণিজ্য ও সংসার-পরিবার সবই উচ্ছন্নে যাবে। এমন আত্মঘাতী পথ অবশ্যই বর্জনীয়।
পাক-ভারত উপমহাদেশের বিরল ব্যক্তিত্ব হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী
(রঃ)
লিখেছেন
শরীয়তের যাবতীয় আহকাম ও মাসায়েল তিন প্রকার,
প্রথমতঃ দৃশ্যতঃ
বিরোধপূর্ণ দলিলনির্ভর মাসায়েল। দ্বিতীয়তঃ দ্ব্যর্থবোধক দলিলনির্ভর মাসায়েল। তৃতীয়তঃ দ্ব্যর্থহীন ও সুস্পষ্ট দলিলনির্ভর মাসায়েল। প্রথম ক্ষেত্রে আয়াত ও হাদীসগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে মুজতাহিদের করণীয় হলো ইজতিহাদ আর সাধারণের করণীয় হলো পুণাংগ তাকলীদ।
উসুলে ফিকাহর পরিভাষায় দ্বিতীয় প্রকার আহকামগুলো বা দ্ব্যর্থবােধক দলিলনির্ভর। এ ক্ষেত্রেও মুজতাহিদের দায়িত্ব হলা উদ্দিষ্ট অর্থ নিধারণ আর সাধারণের কর্তব্য হলো মুজতাহীদের হুবহু অনুসরণ। তৃতীয় প্রকার আহকামগুলো উসুলে ফিকাহর পরিভাষায়
sha}} a1 বা অকাট্য ও সুস্পষ্ট দলিলনির্ভর। এ ক্ষেত্রে ইজতিহাদ ও তাকলীদ উভয়েরই আমরা বিরোধী।
মোটকথা;
কাওকে আইন প্রণয়নের অধিকার দিয়ে তার স্বতন্ত্র আনুগত্য তাকলীদের উদ্দেশ্য নয়। বরং মুজতাহিদ নির্দেশিত পথে কোরআন-সুন্নাহর যথার্থ অনুসরণই হলো তাকলীদের নির্ভেজাল উদ্দেশ্য। অথাৎ অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবােধক আহকামের ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর যথার্থ মর্ম অনুধাবনের জন্যই। আমরা আইনজ্ঞ হিসাবে মুজতাহিদের শরণাপন্ন হই এবং পূর্ণ সিদ্ধান্ত মুতাবেক আমল,
করি। পক্ষান্তরে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন আহকামের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুজতাহিদের সাহায্য ছাড়াই যেহেতু কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ অনুধাবন ও অনুসরণ সম্ভব সেহেতু তাকলীদও সেখানে নিরর্থক। উপরের উদ্ধৃতি তিনটি এ বক্তব্যেরই সুস্পষ্ট প্রমাণ। ইসলামী ফেকাহর নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ গুলোতে প্রমাণ মিলে যে,
মুজতাহিদ কোন ক্রমেই আইন প্রণয়নকারী নন বরং কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত আইনের ব্যাখ্যা দানকারী মাত্র!
আল্লামা ইবনে হোমাম ও আল্লামা ইবনে নজীম
(রঃ)
তাকলীদের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে।
التقليد اليمن بقول من ليس رله اختي الكج بلاحجة
. যার বক্তব্য শরীয়তের উৎস নয়,
তার বক্তব্যকে দলিল প্রমাণ দাবী না করে মেনে নেয়ার নাম তাকলীদ।।
الاقتصاد في التقليب لا والاجتهاد ص/۳۴ دهلی
সুতরাং একজন মুকাল্লিদ
(তাকলীদকারী)
কোনক্রমেই মুজতাহিদকে শরীয়তের স্বতন্ত্র উৎস মনে করে না বরং ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপেই সে বিশ্বাস করে যে,
কোরআন ও সুন্নাহ
(এবং সেই সূত্রে ইজমা ও কিয়াসই হচ্ছে। ইসলামী শরীয়তের শাশ্বত উৎস। ইমাম ও মুজতাহিদের তাকলীদের প্রয়োজনীয়তা শুধু এজন্য যে,
কোরআন-সুন্নাহর বিশাল ও বিস্তৃত জগতে সে। একজন আনাড়ী পথিক। পক্ষান্তরে মুজতাহিদ হলেন কোরআন সুন্নাহর মহা সমুদ্র মন্থনকারী আস্থাভাজন ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সুতরাং শরীয়তের আহকাম ও মাসায়েলের ক্ষেত্রে তার পরিবেশিত ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তই আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য।
এবার আপনি ইনসাফের সাথে বিচার করে বলুন,
শিরক নামে আখ্যায়িত করার মত এমন কি অপরাধটা এখানে হলো?
তাকলীদের নামে কাউকে আইন প্রণেতার মর্যাদায় বসানো নিংসন্দেহে শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে,
জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং নৈতিকতা ও পবিত্রতার এ দৈন্যের। যুগে নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপর ভরসা না করে আইনের ব্যাখ্যদানকারী মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত মুতাবেক আমল করাই নিরাপদ। শরীয়ত ও যুক্তির দাবীও তাই।
ধরুন,
দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান বিন্যস্ত ও গ্রন্থবদ্ধ আকারে আমাদের সামনে রয়েছে। কিন্তু দেশের কোটি কোটি নাগরিকের মধ্যে কয়জন সংবিধানের উপর সরাসরি আমল করতে পারে?
নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর কথা তো বলাই বাহুল্য। এমন কি যারা আইনশাস্ত্রে সনদধারী নন,
অথচ উচ্চ শিক্ষার আলোক প্রাপ্ত, তারাও ইংরেজী জানেন বলেই আইনগ্রন্থ খুলে আইনের জটিল ধারা সম্পর্কে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের বোকামি করেন না,
বরং বিজ্ঞ আইনবিদের পরামর্শ মেনে চলারই প্রযয়োজন অনুভব করেন। এটা নিশ্চয় কোন। অপরাধ নয় এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী কোন ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে সরকারের পরিবর্তে আইনবিদকে আইন প্রণেতার মর্যাদা দানের অভিযোগও তুলবে না। কিছুতেই। তাকলীদের ব্যাপারটাও কিছুমাত্র ভিন্ন নয়। কেননা তাকলীদের দাবী শুধু এই যে,
জটিল মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোরআন সুন্নাহ সম্পর্কে মুজতাহিদ প্রদত্ত ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে তার নির্দেশিত পথেই কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করে যেতে হবে।
সুতরাং কোন অবস্থাতেই এ অপবাদ দেয়া যায় না যে, মুকাল্লিদ কোরআন-সুন্নাহর পরিবর্তে মুজতাহিদকে শরীয়তের উৎস মনে করে। তাওহীদের সীমা লংঘন করেছে।
অবশ্য উভয় তাকলীদেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ নিজস্ব যোগ্যতার অভাবহেতু সুগভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী মুজতাহীদের পরিবেশিত ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তের আলোকে কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করে যাওয়া। বলাবাহুল্য, যে, উপরোক্ত অর্থে তাকলীদের বৈধতা ও অপরিহার্যতা কোরআন সুনাহর অকাট্য দলিল দ্বারা সুপ্রমাণিত।
প্রথমে আমরা তাকলীদের সমর্থনে কোরআনুল কারীমের কয়েকটি আয়াত কিঞ্চিত ব্যাখ্যা সহ পেশ করবো!
اتها التي يناموا أطرابله رايا السل و أولي الأمر مگه (سورة النساء ۵۹)

No comments