Header Ads

Header ADS

আঁধার রাতের মুসাফির (র্পাট-১) সোনারী ঐতিহ্যে অশুভ আঁধার

 


পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বস্তি। তিন দিকে বাগান। দক্ষিণে সিরানুবিদার চড়ায় বরফপাত শুরু হয়েছে। কেল্লার মত বিশাল বাড়ীর ছাদে রোদ পােহাচ্ছিল সালমা। প। শ বছর বয়সেও শরীরের কোথাও ভাঁজ পড়েনি। আতেকা চৌদ্দ-পনর বছরের উঠতি বালিকা। আরব আর স্পেনীশ রক্তের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এক অপূর্ব নারী প্রতিমা। বই হাতে সিড়ি ভেঙ্গে ছাদে উঠে এল আতেকা।

ও ‘চাচীজান, বই খুলতে খুলতে বলল আতেকা। বইয়ের জন্য সাঈদের ঘরে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়িই ফিরে আসব। কিন্তু জোবাইদার সাথে কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গেল। এখনাে গ্রানাডা থেকে সাঈদ ফিরে আসেনি। মনসুর খুব চিন্তা করছে। জাফর এবং জোবাইদাও দারুণ পেরেশান। জাফর বলল, সন্ধ্যা পর্যন্ত ফিরে না এলে তাকে খুঁজতে সে নিজেই গ্রানাডা যাবে। ওর ভয় হচ্ছে, গােয়েন্দারা তাকেও আবার খৃষ্টানদের হাতে তুলে না দেয়।'

শােয়া থেকে উঠে বসল সালমা। শান্তনার স্বরে বললােঃ আতেকা, আমি জানি তুমি সাঈদের জন্য যথেষ্ট পেরেশান। আবু আবদুল্লাহ কিছু দিনের মধ্যে জামানত হিসেবে চারশ ব্যক্তিকে ফার্ডিনেন্ডের হাতে তুলে দেবে। এরপর গ্রানাডার কাউকে আর সন্ধি চুক্তির বিরুদ্ধে জবান খুলতে দেবে না। ওদের দুশ্চিন্তা ছিল তােমার চাচাকে নিয়ে। এ জন্য আমীন এবং ওবায়েদকেও সেই সাথে দেয়া হয়েছে। অবশ্য ওমরের মত তাদের নামও লিষ্ট থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করছে তােমার চাচা।'

ঃ ‘চাচী আম্মা! সাঈদ ছাড়া যে মনসুরের কেউ নেই, তাই তার জন্য আমি পেরেশান।'

‘আচ্ছা বেটি, কোন চাকরকে গ্রানাডা পাঠিয়ে তার খোঁজ নিতে বলব তােমার চাচাকে । কিন্তু বারবার সাঈদদের ঘরে যাওয়া তােমার ঠিক না। তুমি এখন বড় হয়েছে। জানি, সাঈদ খুব ভাল ছেলে। তােমার চাচা তাকে ছেলের মতই স্নেহও করেন। কিন্তু তার সাথে এভাবে তােমার মেলামেশা ওমর ভাল চোখে দেখে না।'

রাগে বিবর্ণ হয়ে গেল আতেকার চেহারা। বই একদিকে রাখতে রাখতে বললঃ আপনিতাে জানেন, ওমরের নামই আমি শুনতে পারি না।'

আঁধার রাতের মুসাফির।

মুচকি হাসল সালমা।

ঃ হ্যা আমি জানি। ওর অভ্যাসগুলাে আমারও ভাল লাগে না। কিন্তু তােমার চাষ তাকে আমীন এবং ওবায়েদের চেয়েও বেশী ভালবাসেন। তার ধারণা, তুমি বড় হলে ওকে অতটা ঘৃণা করবে না।'

ঃ চাচী আম্মা, এ কি বলছেন আপনি?'

ও ‘বেটি, তােমাকে কেউ জোর করে বাধ্য করবে, আমি তা বুঝাতে চাইনি। তবে তােমার চাচা বলছিলেন, কদিন পরই ওমর ঘরে ফিরে আসবে। তখন তােমাকে একট। সাবধান হতে হবে। তাছাড়া এখন পরিস্থিতি খুব খারাপ। এ অবস্থায় ঘর থেকে যখন তখন তােমার বাইরে যাওয়া এমনিতেও ঠিক না। দরকার হলে জাফরের বিবিকে খবর দিয়ে আমাদের এখানে ডেকে নিয়ে আসব।'

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আতেকা বললঃ ‘চাচাজান ওমরের ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারলে, আমীন এবং ওবায়েদের কি দোষ ছিল?

ও তিনি তাদেরও বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উজির আবুল কাশিম বলল, আপনার তিন ছেলেকেই যদি ছেড়ে দিই তবে অন্যরাও তাদের সন্তানদের ছাড়িয়ে নিতে চাইবে। তাই আমি কেবল আপনার এক ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার ওয়াদা করতে পারি।

ঃ এ কথা শুনেই আমীন ও ওবায়েদকে বাদ দিয়ে চাচা ওমরের নাম প্রস্তাব করলেন?'

ঃ হ্যা, তুমি তাে জান, আমার সতীনের ছেলের প্রতি তিনি একটু বেশী দুর্বল। ও ‘ওর মায়ের প্রতিও কি তিনি দুর্বল ছিলেন?

ও হ্যা, সে আমার বড় বিপদের কারণ ছিল। তােমার চাচা যদি হামিদ বিন জোহরাকে ভয় না পেতাে তবে বেচে থাকাটাই হতাে আমার জন্য মুশকিল। তবে এখন সে বেঁচে নেই, তাই এ নিয়ে আমাদের কথা বলা ঠিক নয়, বরং তার জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত।'

|ঃ জোবাইদা বলছিল, সেভিলের এক ইহুদী বংশের সাথে তার সম্পর্ক ছিল, গ্রানাডা এসে তার পিতামাতা মুসলমান হয়েছিলেন। আব্বাজান তাকে দেখতেই পারতেন না। আম্মাজানও তার সাথে কথা বলা পছন্দ করতেন না।'

ঃ ‘বেটি, তােমার আব্বা আম্মা ছিলেন আমার পক্ষে। একবার তিনি যখন শুনলেন, তােমার চাচা আমার সন্তানদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন না, আমাদেরকে গ্রানাডায় ডেকে নিয়েছিলেন তিনি। তােমার আব্বার চেয়ে মাত্র দেড় বছরের ছােট ছিল তােমার চাচা। তবু নাসিরের সামনে তিনি দাড়াতে পারতেন না। তার চোখে চোখ রেখে এলাকার কেউ কথা বলতে সাহস করত না। আতেকা, রাগলে তােমার চোখ দুটো ঠিক নাসিরের মত মনে হয়।'

ঃ চাচী আম্মা, সেদিনগুলাে আমার আবছা আবছা মনে পড়ে। কিন্তু আপনারা খুব

তাড়াতাড়ি গ্রানাডা চলে এসেছিলেন।'

ঃ হ্যা, ওমরের মায়ের মৃত্যুর পর নিজের বা চাচা। তার সাথে আমাকেও ফিরে আসতে হল।'

চাচী আম্মা, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করব? ঃ বলাে।' ও ‘চাচাজান কি দুশমনের গােলামী করতে রাজী হয়ে যাবেন?'

ও না বেটি! যার তিন ভাই মুসলমানদের আজাদী রক্ষার জন্য শহীদ হয়েছে, খৃষ্টানদের গােলামীতে কিভাবে তিনি রাজি হতে পারেন?

ও নিজের সন্তানদের তিনি জামানত হিসেবে পাঠিয়েছেন। এতে কি প্রমাণ হয় না, গ্রানাডার পরাজয় তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন?'

ও চুক্তির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে চারশাে ব্যক্তিকে খৃষ্টানদের হাতে তুলে দেবে আবু আবদুল্লাহ এবং তার সঙ্গীরা এ তাে কল্পনাও করা যায় না। হায়! সরকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করার ক্ষমতা যদি তােমার চাচার থাকতাে!”

ও ‘ধরুন, হামিদ বিন জোহরা যদি সফল হন, হঠাৎ আমরা সংবাদ পাই মরক্কো, তুরস্ক অথবা মিসরের যুদ্ধ জাহাজ আমাদের সাহায্যে স্পেনের পথ ধরেছে, চাচাজান তখন কি করবেন? সাঈদ বলছিল, স্পেনের মুসলমানরা আরেক ইউসুফ বিন তাশফিনের প্রতীক্ষা করছে। তার ধারণা, হামিদ বিন জোহরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবেন না।'

কিছুক্ষণ ব্যথাভরা চোখে আতেকার দিকে তাকিয়ে রইল সালমা। কিছুটা সংযত হয়ে বললঃ মুজাহিদরা যখন ময়দানে আসবে, স্পেনের আজাদীর পরিবর্তে ছেলেদের জীবন বাঁচানাের চেষ্টা করবেন তােমার চাচা, এমনটি ভেবাে না। কিন্তু এখন সেসব। আশার সকল প্রদীপ নিভে গেছে! বাইরের কেউ আসবে না আমাদের সাহায্যে। আমাদের আগে কর্ডোভা, সেভিল এবং টলেডাের মুসলমানরাও এমন স্বপ্ন দেখতাে যে, কুদরতের কোন মােজেযা খৃষ্টানদের গােলামী থেকে তাদের মুক্ত করবে। কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে দুনিয়ার কোথাও তাদের জন্য এতটুকু আশ্রয় থাকে না। শত ঝড় ঝাপটায়ও যারা আশার আলাে জ্বালিয়ে রাখে ইউসুফ বিন তাশফিন ছিলেন তাদেরই কোরবানীর ফল। দ্বীনের জন্য যেসব আলেম কারা নির্যাতন ভােগ করছিলেন, তাদের দাওয়াতে সাড়া দিয়েছিলেন ইউসুফ বিন তাশফিন। তখন নেতারাই শুধু গােমরাহীর পথ ধরেছিল। তাদের আত্মকলহ স্পেনকে নিয়ে গিয়েছিল ধ্বংসের কাছাকাছি। কিন্তু কওমের অধিকাংশ জনতা তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদাসীন ছিল না। স্বাধীনতার ঘরের ও বাইরের দুশমনকে চিনতাে ওরা। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ার মত বিচক্ষণ ব্যক্তি-তখনও দু'একজন বেঁচে ছিলেন। এ জন্যই ইউসুফ বিন

শাফিন স্পেনের সাগর তীরে নামতেই সমগ্র কওম তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল।

ম এই সচেতনতা নেতাদেরও একই ঝান্ডার নীচে সমবেত হতে বাধ্য করেছিল।


কিন্তু আজ সুখের আশায় গ্রানাডার ওমরা স্বাধীনতা,

লতে চাইছে। হারিয়ে আত্মপ্রবঞ্চিত, ওরা ভাবছে

| অজাহিদরা যে কলিজার he জালাতে পারেনি। কওমের

হিম্মত ওদের জন্য হতাে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন আবু আৰদ

পত্যকা চারদিক থেকে

গেয়ে জনতার সুদৃঢ় সেই ঐক্যের চেতনা। ওলামারা আত্মপ্রবঞ্চিor ডিনে গ্রানাডা কজা করলে নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারবে ওরা। মুজাহিদরা যে ন চলেছেন সে পবিত্র খুনে গ্রানাডাবাসী স্বাধীনতার প্রদীপ জ্বালাতে পারেনি

বনের সামান্যতম স্পন্দন বাকী থাকলেও মুসার হিম্মত ওদের জন। লেকচীর। এ মহান ব্যক্তি শেষ কথাগুলাে বলে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্লাহর দরবার থেকে, তার দু’চোখ ছিল অশ্রুতে ভেজা।

| ‘চাচীজান, আমাদের নিরাশ হলে চলবে না। আপনি তো জানেন মুজাহিদ নিয়ে এখনাে লড়ে যাচ্ছেন বদর বিন মুগীরা। ঈগল উপত্যকা চার যিরেও দুশমন তার হিম্মত কমাতে পারেনি।

আমি জানি। কিন্তু এ অল্প ক’জন মুজাহিদ সমগ্র কওমের পাপের আদায় করতে পারে না। তােমার চাচা বলছিলেন, ঈগল উপত্যকা গ্রানাডা, বিচ্ছিন্ন। কতদিন এ সাহস নিয়ে ওরা দুশমনের মােকাবিলা করতে পারবে আমরা

। আমরা জানি না কত খুন রয়েছে ওদের শিরায়, কতদিন জ্বালিয়ে রাখতে সাত ওরা আজাদীর এ চেরাগ। আমরা শুধু জানি, গােলামীর পরিবর্তে ওরা শাহাদাতের পর ধরেছে। যে মানসিক চেতনা জয়পরাজয়ের ব্যাপারে ভাবনাহীন করে তােলে মানুষকে সে চেতনা রয়েছে তাদের মধ্যে। তাদের অনুসরণ করার মত সাহস নেই গ্রানাডাবাসীর। আমরা শুধু বাঁচতে চাই অথচ জিন্দেগী আমাদের ওপর থেকে হাত

গুটিয়ে নিচ্ছে। আমাদের অবস্থা সে ব্যক্তির মত, মৃত্যু ভয়ে যে নিজেই নিজের গলা টিপে ধরেছে। মুসার মত ব্যক্তিত্বের চিৎকার যাদের বিবেকে সাড়া জাগাতে পারেনি, তাদের অথর্বতার এরচে' বড় প্রমাণের আর কি প্রয়ােজন! শহীদ হওয়ার আকাংখা নিয়ে তিনি যখন আবু আবদুল্লাহর দরবার থেকে বেরিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন একা।

‘কিন্তু গ্রানাডার গুটিকয় আলেম এবং ওমরা সমগ্র কওমের কিসমতের ফয়সালা করতে পারে না। মুসলমানদের প্রয়ােজন একজন সাহসী নেতা। খােদা করুন হামিদ বিন জোহরা যেন সফল হন। তখন দেখবেন, সিরানুবিদার সমগ্র এলাকা মুক্তিকামী মানুষের দুর্গে পরিণত হবে। এতে গ্রানাডার জনগণও জেগে উঠবে। সাঈদ বলছিল, গ্রানাডার মানুষ এখনাে কারাে ইশারার অপেক্ষায় আছে।' | ‘ভুল আতেকা ভুল, গ্রানাডার মানুষ সেদিনের প্রতীক্ষা করছে, যেদিন আলহমিরায় প্রবেশ করবে ফার্ডিনেন্ড । এরপর কয়েক হপ্তার মধ্যেই শুরু হবে ওদের দুর্ভাগ্যের কাল রাত । সে রাত হবে সীমাহীন আঁধারে ভরা। যে আঁধার কখনাে শেষ হবে না। আতেকা, খােদার কাছে দোয়া কর, চুক্তির সময়সীমার মধ্যেই যেন বাইরের সাহা পৌছে যায় । গ্রানাডাবাসীর ধারণা, হামিদ বিন জোহরা বেঁচে নেই।

ঃ খােদার দিকে চেয়ে এমন কথা বলবেন না। তিনি বেঁচে আছেন। অবশ্যই

আসবেন তিনি।'





ঃ বেটি, কল্পনার প্রদীপ জ্বালাতে তােমায় আমি মনে আজ এমন অন্ধকার কখনাে ভা আলােময় হবে, এমন ক

প্রদীপ জ্বালাতে তােমায় আমি নিষেধ করব না। আমার চোখের

তা আলোময় হবে, এমন কল্পনাও করতে পারি।


ও চাটীজান, ফার্ডিনেডের গােলামী আমি সইতে পারবাে না। যখন বুৰ""" ছাড়া কোন উপায় নেই, এখানে থাকব না আমি। আলফাজরায় মামার কাছে চলে যাব। মুক্তিপ্রিয় মানুষের সাথে না খেয়ে হলেও স্বাধীন থাকব। আব্বাজান বলতেন, পরাধীনতার চেয়ে শাহাদাতই বড়।

চোখ ফেটে অশ্রু বেরিয়ে এল আতেকার। সে অশ্রু লুকানাের জন্য সহসা উঠে দাড়ালাে ও। কয়েক পা এগিয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে তাকিয়ে রইল দক্ষিণ-পূর্বে সবানবিদার বরফ ঢাকা চুড়ার দিকে।

সালমা উঠতে উঠতে বললঃ আতেকা, ঘরে চলাে। বাইরে শীত বাড়ছে। ঃ চাচীজান, আপনি যান, আমি এখুনি আসছি।'

সিড়ির দিকে এগিয়ে গেল সালমা। কার্নিশে হেলান দিয়ে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে বইল আতেকা। অতীতে হারিয়ে গেল ওর মন।

সামনের অগভীর নহরে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল ও। পাহাড়ী ঢালুর মাঝ দিয়ে নীচের দিকে নেমে এসেছে এক নহর নদীর কিনার পর্যন্ত। বস্তির লােকদের যাওয়া আসার জন্য দু'পাশে সংকীর্ণ পথ। কিন্তু ঘােড়সওয়ারদেরকে নহরের পাড় ঘেষে প্রায় আধমাইল এগিয়ে যেখানে থেকে নহর শুধু হয়েছে সে পাহাড় হয়ে যেতে হয়। নহরের ওপারের এক বাড়ীতে গিয়ে ঠেকল তার দৃষ্টি।

বাড়ীটা মুহম্মদ বিন আবদুর রহমানের। তার বিধবা স্ত্রী আমেনা আতেকার মায়ের প্রতিবেশী। গাঁয়ের লােকেরা বলতাে তার পিতা হামিদ বিন জোহরা একজন বিখ্যাত আলেম। আতেকার পিতার সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। আতেকা যখন পিতামাতার সাথে গ্রানাডায় ছিল, তাদের বাড়ী ছিল খুব কাছে। সাঈদ হামিদের তৃতীয় ছেলে। বয়স আতেকার চেয়ে বছর তিনেক বেশী। খেলার বয়সটা একসাথেই কাটিয়েছে দু’জন । যুদ্ধের প্রথম দিকে শহীদ হয়েছিল সাঈদের বড় দু’ভাই। তাদের এবং বুড়াে বাপের ধৈর্যের কাহিনী আতেকাকে শুনাতাে তার পিতামাতা।

হামিদ বিন জোহরার মেয়ে আমেনার প্রতি ছিল আতেকার বড় আকর্ষণ। ও তাকে বলত খালাম্মা। নিজের ঘরে প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদেরকে দ্বীনের তালীম দিতেন আমেনা। আতেকা তার ছাত্রী হয়েছিল পাঁচ বছর বয়সে।

ও বংশের যুবক মুহম্মদ বিন আবদুর রহমান। নাসিরের কয়েক বছরের ছােট। আনাডা গেলে তিনি অবশ্যই নাসিরের বাসায় যেতেন। তার মাধ্যমেই হামিদ বিন

জোহরার সাথে নাসিরের পরিচয় ঘটে। সে পরিচয়ের সূত্র ধরেই একদিন সুন্দরী আমেনা হলেন তার জীবন সাথী।

আতেকার বয়স যখন দু’বছর, সীমান্তবর্তী এক কিল্লার দায়িত্ব দেয়া হল নাসিরকে। আতেকা এবং তার মাকে পাঠিয়ে দেয়া হল এই গাঁয়ে। বিয়ের কয়েক মাস পর স্ত্রীকে বাড়ীতে রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে গেলেন মুহম্মদ। তার যাবার দু’মাস পর জনা

পাঠ।

পা

হল মনসুরের।

আমেনার সাথে নিজের বিশ্বস্ত চাকর জাফর এবং তার স্ত্রী জোবাইদাকেও গাঁয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন হামিদ বিন জোহরা। গ্রানাডার মত স্বামীর গাঁয়ের বাড়ীতে ছেলেমেয়েদেরকে দ্বীনের তালীম দিতে লাগলেন আমেনা। বাড়ীর নীচতলায় তিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন।

কখনাে হামিদ বিন জোহরা আবার কখনাে কোন চাকরের সাথে বােনের কাছে আসত সাঈদ। তার ক্ষুদ্র দুনিয়া হাসি আনন্দে ভরে উঠত। ভোের হলেই আতেকা ছটে আসত আমেনার ঘরে। ফটক বন্ধ থাকলে চাচা জাফরকে ডাকতাে চিৎকার করে। জাফর মৃদু হেসে দরজা খুলে দিত। ভিতরে ঢুকেই সাঈদ, সাঈদ’ বলে ডাক জুড়ে দিত। ও। কোথাও লুকিয়ে পড়ত সাঈদ। ও আমেনার কাছে গিয়ে বলতঃ ‘খালাম্মা, সাঈদ কোথায়?'

কিছু না জানার ভান করে এদিক ওদিক তাকাতেন আমেনা। বাড়ীর সবখানে তাকে খুঁজত আতেকা। হঠাৎ সমগ্র ঘর ভরে উঠত সাঈদের হাসিতে। সাঈদদের গ্রামে। থাকার দিনগুলাে বড় ভাল লাগত ওর কাছে। মাদ্রাসায় ছুটি পেলেই ও এসে সারাদিন কাটাত সাঈদের সাথে। কখনাে নিয়ে যেত নিজের বাড়ীতে। কখনাে পাহাড়ের আরাে। কিছু ছেলেমেয়ে নিয়ে গাঁয়ের বাইরে বাগান, নদী অথবা পাহাড়ের দিকে বেরিয়ে পড়ত ওরা । একটু বড় হয়ে ঘােড়ায় চড়তে শিখলাে সাঈদ। দশ বছর বয়সেই সে হয়ে উঠল ভাল ঘােড়সওয়ার। তাকে এবড়াে থেবড়াে পথে ঘােড়া ছুটাতে দেখে মায়ের কাছে জিদ ধরত আতেকা, ‘আমিও ঘােড়ায় সওয়ারী করব। কিছুদিন বিভিন্ন টালবাহানায় তাকে ফিরিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত এ শর্তে রাজি হলেন যে, তার ঘােড়ার বাগ ধরে রাখবে। এক চাকর।।

একবার কয়েকদিনের ছুটিতে বাড়ী এলাে নাসির। মেয়ের আগ্রহ দেখে ছােট্ট ঘােড়া কিনে দিল তাকে। তিন দিন পর স্ত্রীকে বলল, মেয়ের এখন অন্য চাকরের হেফাজতের প্রয়ােজন নেই। পর দিন নাসির যখন ঘােড়া নিয়ে বের হল আতেকা হল তার সঙ্গী। সাঈদ গ্রামে এলে তার সাথে ঘােড়দৌড়ের মহড়া দিত আতেকা।।

| এ মধুময় স্বপ্নের দিনগুলাে হারিয়ে গেল একদিন। ওর মনে হল বুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে জিন্দেগীর হাসি আনন্দ ধীরে ধীরে তার চাদর গুটিয়ে নিচ্ছে। নহরের ওপারের

বাড়ীটা তখনও তার দৃষ্টির সামনে। কিন্তু হামিদ বিন জোহরার মেয়ে, যাকে ও খালাম্মা ডাকত, আর তার খালু - কেউ তখন ছিলেন না ওখানে।।

সব তখন তিন বছরের শিশু। দক্ষিণের রণক্ষেত্রে গিয়েছিলেন মুহম্মদ বিন। দৰ রহমান। মালাকার পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকার হেফাজতের দায়িত্ব দেয়া হল তাকে। একদিন আমেনা সংবাদ পেল তিনি আহত হয়েছেন। তাকে পৌছে দেয়া। হয়েছে সাগর পাড়ের কয়েক মাইল দূরের এক কেল্লায়। আমেনা পিতাকে সংবাদ পাঠালঃ মনসুরকে জাফর ও জোবাইদার কাছে রেখে স্বামীর কাছে যাচ্ছি। আতেকা

এবং তার মাও মনসুরের প্রতি দৃষ্টি রাখবে। আপনি সাঈদকে কয়েকদিনের জন্য এখানে • পাঠিয়ে দিবেন। মনসুরের পিতার অবস্থা একটু ভাল হলেই আমি ফিরে আসব।'

বস্তির চারজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে আমেনার সাথে পাঠিয়ে দিলেন হাশিম। কয়েকদিন পর তারা ফিরে এসে বললঃ মুহম্মদ বিন আবদুর রহমানের অবস্থা আশংকাজনক নয়। দু’এক হপ্তার মধ্যেই তিনি হাঁটাচলা করতে পারবেন।'

আতেকা এবং তার মা প্রতিদিন সকাল বিকাল আমেনাদের ঘরে যেত। এক মাসের মধ্যেও মুহম্মদের কোন সংবাদ না পেয়ে নিজের চাকরকে পাঠিয়ে দিলেন হাশিম। তার যাবার তৃতীয় দিনে যুদ্ধ ফেরত গাঁয়ের এক যুবক বললঃ স্বামী-স্ত্রী দুজনই শহীদ হয়ে গেছেন। সে বলল, খৃষ্টানরা সাগর পাড়ের কেল্লা দখল করে পাহাড়ী কেল্লায় হামলা করল। কিন্তু সফল হল না। সুস্থ হয়ে মুহম্মদ বিন আবদুর রহমান জওয়াবী হামলা করে ওদের সাগর পাড়ে সরে যেতে বাধ্য করল। ততদিনে মালাকায় হামলা করার জন্য দুশমনের অতিরিক্ত ফৌজ সাগর পাড়ে নামানাে হয়েছে। ওদের একদল পূর্ব দিকে অন্য দল পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেল। সওয়ারদের গতি ছিল মালাকার দিকে। আশপাশের চৌকিগুলাের হিফাজতের দায়িত্ব স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে ফৌজ নিয়ে মুহম্মদ বিন আবদুর রহমানকে মালাকা পৌছার নির্দেশ দিলেন সিপাহসালার।

কেল্লার তিনশ সিপাইকে মুহম্মদ সূর্য ডােবার আগেই তৈরী হতে বললেন। এশার নামাজ শেষে সবাই মালাকার পথ ধরলাম। হামলার ভয়ে উপকুলের সােজা পথ ছেড়ে আমরা চলছিলাম আঁকাবাঁকা পথ ধরে। শেষ রাতে এক সংকীর্ণ পথ অতিক্রম করছিলাম আমরা, হঠাৎ ডানদিকের পাহাড় থেকে শুরু হল তীর আর পাথর বৃষ্টি। দেখতে না দেখতে আমাদের কয়েকজন শহীদ হয়ে গেল। ঘােড়াসহ পাশের খাদে গিয়ে পড়ল কতক সওয়ার। পদাতিকদেরকে পাহাড় কজা করার জন্য সমগ্র শক্তি দিয়ে চিৎকার করে হুকুম দিলেন মুহম্মদ। সওয়ারদেরকে নির্দেশ দিলেন সফর চালিয়ে যেতে। কিন্তু। রাতের নিঃসীম আঁধার ও যখমীদের আর্ত চিৎকারে হারিয়ে গেল তার সে আওয়াজ।।

খােশ কিসমত বলতে হয় আমাদের পেছনের দল, যারা তীর ও পাথরের আওতার বাইরে ছিলাে, পাহাড়ে উঠে গেলাে। রাতের অন্ধকারে দুশমনদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু পেছনে আলাহু আকবারের না’রা শুনে ওরা পালিয়ে গেল। আমাদের


যখমী আর শহীদের সংখ্যা কত, অন্ধকারে জানা সম্ভব ছিল না। এদিকে মুহম্মদ বিন আবদুর রহমানের কোন পাত্তা না পেয়ে এগিয়ে যাওয়া লােকদের মধ্যে তাকে খুঁজে দেখার জন্য এক সওয়ারকে হুকুম দিলেন নায়েবে সালার। বললেন, তিনি অগ্রগামী দলের সাথে থাকলে, অন্ধকারে না এগিয়ে পাহাড়ে চড়ে রাত কাটানাের পরামর্শ দেবে। তাকে।' সাহায্যের জন্য আশপাশের বস্তির লােকদের ডেকে আনতে পাঠানাে হল। কজনকে।

একটু পর এগিয়ে যাওয়া লােকেরা ফিরে এল। ওদের কাছে শুনলাম দু’মাইল সামনে রাস্তার ওপর যে ব্রীজটি ছিল তা ভাঙ্গা। কতক সওয়ার দ্রুত ছুটতে গিয়ে বেখেয়ালে সাঁকো থেকে নীচে পড়ে যায়। মুহম্মদ বিন আবদুর রহমান এবং তার স্ত্রীর কোন খবর নেই।।

ভাের হওয়ার আগেই আশপাশের বস্তির কয়েকশ লােক পৌছে গেল ওখানে। মশালের আলােয় খোঁজা শুরু হল যখমী আর শহীদদের লাশ। কেউ কেউ মশাল নিয়ে। নেমে পড়ল নহরে। কেউ এগিয়ে গেল টিলার খাঁজে। নহরে পাওয়া গেল চল্লিশটা লাশ। আমেনার লাশ পড়েছিল তার ঘােড়ার নীচে। মুহম্মদকে ওখানেও পাওয়া গেল।

। ভােরের আলাে ফুটতেই ঠিলার ওপর থেকে এক সিপাই আওয়াজ দিয়ে বললঃ এদিকে আসুন, মুহম্মদ বিন আবদুর রহমান এখানে।

| আমরা ছুটে গেলাম। তাঁর লাশ পড়ে ছিল টিলার অপরদিকে। তার পাশে পড়েছিল দু’জন মুসলমান এবং পাঁচজন খৃষ্টানের লাশ। কয়েক কদম দূরে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল এক যখমী খৃষ্টান। মুহম্মদ বিন আবদুর রহমানের শরীরে ছিল পনরটা যখম। তখনাে হাতে ধরা তরবারী। নায়েবে সালার নিজের জুব্বা খুলে ঢেকে দিলেন তার লাশ। আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ আমি খােদা এবং তার বান্দার কাছে লজ্জিত। বিপদ দেখে তিনি পালাতে চাইছিলেন এমন কল্পনাও করতে পারি না। এমন লােকদের সাথে মরতে পারাও সৌভাগ্য। তার বিবির লাশও এখানে পৌছে দাও।' | আমরা একই পাড়ায় থাকি নায়েবে সালার তা জানতেন, তিনি আমাকে তার তরবারী ঘরে পৌছে দেয়ার হুকুম করলেন।

আমেনা এবং তার স্বামীর শাহাতাদের খবর পেয়েই গ্রামে পৌছলেন হামিদ বিন জোহরা এবং সাঈদ। কয়েক দিন পর ফিরে গেলেন হামিদ। সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন মনসুরকে। কিন্তু তার লালন পালনের ভার নিয়ে নিল আতেকা।

ক্ষেত আর বাগানের দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হল জাফরকে। তার স্ত্রী জোবাইদা। কখনাে আতেকাদের ঘরে মনসুরকে দেখতে যেতাে। কখনাে নিয়ে আসত নিজের। কাছে । আম্মারা সব সময় সাথে রাখতে চাইতেন মনসুরকে। জাফরকেও বলেছিলেন। চাকরদের সাথে এসে থাকতে। কিন্তু তার জওয়াব ছিলঃ আমি কি মুনীবের বাড়ী বেআবাদ করব? আতেকা এবং তার মায়ের অনুরােধ সত্ত্বেও অল্প কদিনের বেশী এ ঘরে

থাকেনি সাঈদ। তবুও ভাগ্নেকে দেখতে দিনে দু'একবার অবশ্যই আসতাে সে। ও ফিরে

সব সময় তার সাথে যেতে জেদ ধরত মনসর। আতেকা বলন কাছে থাকবে না?'

ঃ না, আমি মামার সাথে যাব।' ও ‘তােমাকে গল্প শুনাবে কে?' ও মামা শুনাবে?'

নসরকে কাঁধে বসিযে হাঁটা দিত সাঈদ। কিন্তু ঘরে পেঁৗছলেই আতেকার কথা র পড়ত মনসুরের। একটু পরই তাকে নিয়ে ফিরে আসত সাঈদ। বলতঃ আতেকা। নাও ওকে।'

ও ‘কি মনসুর, মামার সাথে ঝগড়া হয়েছে? ও হ্যা। গােমড়া মুখে জওয়াব দিত ও।। ও মামা গল্প শুনাননি?' ও মামার কাছে আমি গল্প শুনব না।'

আতেকার হৃদয়ে নকশা হয়ে আছে এসব দিনের কত ঘটনা। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে সে হাসি আনন্দের মধুর জগৎ অশ্রুর সাগরে ডুবে গেছে। ভবিষ্যতের আকাশ ছেয়ে গেছে আধারের কাল পর্দায়। পাড়ার আর সব ছেলেমেয়ের মত সাঈদ এবং আতেকাও শুনছে জাতির সে সব বেঈমান এবং গাদ্দারদের কাহিনী- যাদের কারণে গ্রানাডার লশকর এবং কবিলার মুজাহিদদের বিজয়গুলাে পরাজয়ে রূপ নিয়েছিল । এরপর শুরু হল সে দুঃসময়, যখন গ্রানাডার দিকে এগিয়ে আসল ফার্ডিনেন্ডের অবরেধি।

আতেকার পিতা নাসির বিন আবদুল মালিককে গ্রাম থেকে পাঁচ মাইল উত্তরে এক কিল্লা এবং তার ডান-বায়ের চৌকিগুলাের দায়িত্ব দেয়া হল তাকে। আলফাজরার দিক থেকে গ্রানাডায় রসদ আসার পথ নিরাপদ রাখা ছিল এর উদ্দেশ্য। নাসিরকে এ দায়িত্ব দেয়ার বড় কারণ, তিনি ছিলেন এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সেই সাথে এক বাহাদুর মুজাহিদ। তার ডাকে আশপাশের গাঁয়ের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ফৌজের সাহায্যে ছুটে আসতে পারতাে।

নতুন পায়ত্ব পেয়ে পাহাড়ী কবিলাগুলাের মধ্যে জিহাদের প্রেরণা সষ্টির জন্য। পবন জোহরার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করলেন তিনি। সিপাহসালারের কাছে।

মনে যানাডার পরিবর্তে তিনি যদি একে কেন্দ বানান, তাহলে সিরাবদা

তার ডাকে সাড়া দেবে। আমাদের গা যখন স্বেচ্ছাসেবকদের আস্তানা হবে। থানাডার পথের সবকটা চৌকির পেছন দিকটা থাকবে নিরাপদ।

পদের সাহস বাড়ানাের জন্য এমনিতেই গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন হামিদ বিন জোহরা।

সিপাহসালারের ইশারা পেয়ে গ্রানাডা ছেড়ে গ্রামে চলে এলেন তিনি। গ্রামে চাচা হাশিম হলেন হামিদ বিন জোহরার সহযােগী। আতেকার পিতার মত তিনিও অনেকদিন থেকেই তাকে জানতেন। হাশিমের বড় ছেলে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার আগে শিক্ষা গ্রহণ করেছিল তার কাছে। গ্রানাডায় থাকার সময় কয়েকবার তিনি হামিদ বিন জোহরার বক্তৃতা শুনেছেন। এজন্য গ্রানাডা ছেড়ে তার গায়ে আসার সংবাদে তিনি দারুণ খুশী হলেন। এলাকার সর্দারদেরকে নদীর পাড়ে এ মর্দে মুজাহিদকে সম্বর্ধনা জানানাের জন্য খবর পাঠালেন তিনি।

উচ্ছসিত আবেগ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ তাকে অভ্যর্থনা করছে, কল্পনায়। আতেকা তা দেখতে পাচ্ছিল। একটু পর মা, চাচী এবং গায়ের অন্যান্য মহিলাদের নিয়ে। দেউড়ির কাছে মেহমানখানার ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছিল হামিদ বিন জোহরার আগমন দৃশ্য। তার ঘােড়ার বাগ ধরেছিলেন হাশিম। জনতার মিছিল আসছিল তার পিছনে পিছনে। মুহম্মদ বিন আবদুর রহমানের ঘরের পাশ দিয়ে মিছিল এগিয়ে চলল হাশিমের ঘরের দিকে। থামল এসে দেউড়ির কাছে। ঘােড়া থেকে নেমে এক টিলায় চড়ে বক্তৃতা শুরু করলেন তিনি। সবাই তন্ময় হয়ে শুনল তার বক্তৃতা। তাঁর বক্তৃতার হৃদয় মথিত আবেগে সম্মােহিত হলাে শ্রোতারা। সকলেরই চোখ ফেটে বেরিয়ে এল অশ্রুর বন্যা। এখনাে আতেকার মনে গেঁথে আছে তার শেষ কথাগুলাে। তিনি বলছিলেনঃ

প্রিয় ভায়েরা,

কওমের জিন্দেগীতে এমনও সময় আসে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে যখন সবাইকে দুশমনের সামনে বুক পেতে দিতে হয়। নারী, শিশু, বৃদ্ধকে তরবারী ধরতে হয় যুবকদের মত। গ্রানাডার আজাদীর নিভু নিভু প্রদীপ আবার জ্বালানাের জন্য শুধু পুরুষের খুনই নয়, খুন ঢালতে হবে নারীদেরও। আজ এ কথাই বলছে আলহামরার প্রতিটি পাথর।

ও তখন মনে মনে ভাবছিল, হায়! কওমের এক মেয়ে হিসেবে আমিও যদি আমার হিস্সার জিম্মাটা পুরা করতে পারতাম!

দু’দিন পর। আতেকার পিতা বাড়ী এল। ও বললঃ আব্বাজান, হামিদ বিন। জোহরা বলছিলেন, আজ কওমের সবার সামরিক ট্রেনিংয়ের প্রয়ােজন।

‘হ্যা বেটি, আমরা অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতির মােকাবিলা করছি, আমি আনন্দিত, আমার মেয়ে তীরন্দাজী আর ঘােড়সওয়ারী করতে পারে।'

ঃ আব্বাজান, আমি আরাে বেশী শিখতে চাই।' ? তুমি কি শিখতে চাও বেটি?

ও যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা হাসিল করতে চাই। কেল্লায় আপনার কাছে আমাকে নিয়ে যাবেন? ওখানে হয়ত ভাল ওস্তাদও পেয়ে যাব।'


এ ঘরই তােমার কেল্লা। খােদা না করুন কোন বিপদ এলে নিজেই নিজের। করতে পারবে, এ বিশ্বাস আমার আছে। ইনশাআল্লাহ এমন দুঃসময় আসবে। আমার জন্য সাঈদের চেয়ে ভাল ওস্তাদ আর কে হতে পারে? স্বেচ্ছাসেবকদের

কে তীর ছুড়তে দেখেছি। তরবারী চালনায়ও সে যথেষ্ট অভিজ্ঞ । বয়সের কারণে তার অবশ্য আরাে দু'বছর লাগবে ফেীজে ভর্তি হতে। তােমাকে নিয়মিত কিছ অচয় দেয়ার জন্য ওকে বলব। এদিকে ওমরের ট্রেনিংও শেষ। সে কাল বাড়ী এলে হপ্তা। তিনেক থাকবে। তার কাছেও অনেক কিছু শিখতে পারবে তুমি।'

ও আব্বাজান, সাঈদের সাথে সওয়ারী করতে ওমর আমাকে নিষেধ করে। একদিন উঠানে তীরের অনুশীলন করছিলাম, ও আমার ধনু ভেঙ্গে দিয়েছিল ।

ঃ ‘ও একটু বেকুব।' মৃদু হেসে বললেন তিনি।

ও অনেক বেশী বেকুব। আম্মাজানকে বলে কি না, আপনি আতেকাকে খারাপ করে ফেলছেন। সেদিন সাঈদকে এক চড় মেরে দিয়েছিল সে।

ও সাঈদ ওর চেয়ে বয়সে ছােট। কিন্তু চড় খেয়ে হামিদ বিন জোহরার বেটা কিছু বলেনি?'

ঃ সাঈদও ধাক্কা দিয়ে তাকে নদীতে ফেলে দিয়েছিল।' ও সেতাে ছােট সময়ের কথা। এখন ও যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়েছে।

ও না আব্বাজান, গ্রানাডায় থেকে ও আরাে বেকুব হয়ে গেছে। ও বলে, বড় হয়ে নাকি সিপাহসালার হবে।'

ও এতে খারাপের কি দেখলে? ও সিপাহসালার হয়ে সাঈদকে গাধার পিঠে চড়িয়ে নাকি সারা শহর ঘুরাবে। ও ও তােমাকে রাগাতে চেয়েছিল।' বলেই হেসে উঠলেন তিনি।

ঃ আতেকার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া উচিত।' বললেন আম্মারা। ওকে হামিদের ঘরে পাঠিয়ে দিলে ভাল হয়।

ও সে কিছুটা সময় দিতে পারলেতাে তা এর সৌভাগ্যই বলতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তাকে বাইরে থাকতে হয়। তবু তাকে আমি বলব সময় পেলেই যেন আতেকাকে ডেকে পাঠায়। আবশ্য ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশেরও দরকার নেই। হামিদ বিন জোহরা একে যথেষ্ট স্নেহ করেন।'

উত্তরের শস্য ভরা এলাকা ধ্বংস করে গ্রানাডার সামনে ছাউনি ফেলল ফার্ডিনেন্ডের ফৌজ। এজন্য দক্ষিণের যেসব পাহাড়ী এলাকা থেকে গ্রানাডায় রসদ আসত সােদককার কেলাগুলাের গুরুত্ব বেড়ে গেল। কয়েকদিন আসার সুযােগ পায়নি নাসির। এজন্য স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের কাছে। কেলা ততাে বড় ছিল না। মাত্র। পাঁচশাে সিপাইয়ের স্থান হত এতে। কিন্তু তার গঠন ছিল এত মজবুত, এর কাছে।

আসতে যথেষ্ট বেগ পেতে হত হামলাকারীদের।

কিল্লাটি ছিল উঁচু টিলার ওপর। উত্তরে প্রায় দু'শ গজ নীচে ছিল নহর। দক্ষিণ দিক। থেকে গ্রানাডায় যাওয়ার পথ কিল্লার ফটকের একশ' কদম দূরে এসে বায়ে মােড় নিয়েছিল। উত্তর ও পূর্ব দিক ঘুরে পাঁচিলের এত নিকটে এসেছিল রাস্তা, বুরুজ থেকে পাথর ফেললেও তীরের চেয়ে তা বেশী বিপদজনক হত । এখান থেকে পাহাড় ঘেঁষে ঘুরে ঘুরে সড়ক পৌঁছেছিল নুহরের পুল পর্যন্ত। কেল্লা থেকে পুল পর্যন্ত সড়কের ঢল। ছিল এত বিপদজনক, গ্রানাডায় সামানপত্র আনা নেয়ার গাড়ীগুলাে ধাক্কা দেয়ার জন্য কিল্লা এবং পুলের কাছে সব সময় লােক থাকতে হতাে। পুলের হিফাজতের জন্য। নহরের ওপারে ছিল একদল সিপাই।।

| মাইল দেড়েক পশ্চিমে গভীর খাদ। এ খাদ কিল্লার জন্য ছিল খন্দকের মত ।। দক্ষিণে কিল্লার পিছন দিকে উপত্যকা এবং পাহাড়। পাহাড়ী কবিলাগুলাের জন্য ঐ দিকটা ছিল নিরাপদ। যেসব পথে দুশমনের আকস্মিক হামলার সম্ভাবনা ছিল, ওসব স্থানে ছিল ফৌজি চৌকি।।

কিল্লার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে দোতলা ঘরের ওপরতলায় থাকতেন নাসির। নীচতলা। অফিসারদের পরিবারের জন্য। এ কিল্লার পরিবেশ ছিল গ্রামের চেয়ে ভিন্ন। গ্রামে স্বাধীনভাবে ঘােড়া ছুটাতে লজ্জা পেত আতেকা। এজন্য খুব ভােরেই বেরিয়ে পড়ত ও। কিন্তু এখানে ছিল পূর্ণ আজাদী। প্রতিদিন কয়েক মাইল ঘােড়া ছুটাত ও। সমগ্র এলাকার ঘাঁটি এবং পাহাড়ী পথগুলাে হাতের রেখার মতই পরিচিত হয়ে গেল ওর কাছে।

কিল্লার মত বাইরের চৌকির মুহাফিজরাও দেখেই চিনে ফেলতাে তাকে।। প্রথমদিকে কেল্লা থেকে বেরুলে একজন পাহারাদার থাকত তার সংগে । ক'দিন পর। তাকে বারণ করে দিল আতেকা। ছুটন্ত ঘােড়া থেকে তীর ছোড়ার অনুশীলন করত ও। ওকে দেখলে সিপাইদের ফ্যাকাশে চেহারা ঝলমলিয়ে উঠত। সালারের মেয়ের এ সাহস দেখে ওরা এত প্রভাবিত হল যে আরাে অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েদেরও নিয়ে আসতে চাইল । কিন্তু কিল্লায় স্থানের অভাবে তাদের দরখাস্ত কবুল করতে পারলােনা আতেকার

আব্বা।।

এক অফিসারের স্ত্রী গ্রানাডা কন্যা' বলে ডাকত তাকে। অল্প কয়েক দিনে কিল্লা ছাড়াও বাইরের চৌকিগুলােতে এ নামে বিখ্যাত হয়ে হয়ে গেল সে। সূর্য ডােবার সময় কখনাে বাড়ীর ছাদ, কখনাে নহরের ওপারের টিলা থেকে ও উদাস চোখে তাকিয়ে থাকত দক্ষিণ দিকে। লকলকে গমের চারা আর সবুজের সমারােহ ঠেকেছে গ্রানাডা। পর্যন্ত। কখনাে ঘােড়া হাঁকিয়ে ও পৌছে যেত নিজের গ্রামে।

সাধারণত হামিদ বিন জোহরার সাথে সফরে থাকতেন তার চাচা। চাচীর সাথে দেখা করে মনসুরকে দেখার বাহানায় বাড়ী চলে যেত সে। ফেরার পথে হামিদের লাইব্রেরী থেকে তুলে নিত একটা দুটা বই।

আঁধার রাতের মুসাফির

ডবাসীর জন্য যেসব স্বেচ্ছাসেবক রসদ সামান পৌছাত, সাঈদ ছিল তাদের = নাড়া থেকে ফেরার পথে কখনাে সখনাে দেখা হত দু’জনার। গ্রানাডা অবরাে- পর কয়েকবার এ কিল্লা কজা করার পায়তারা করে ব্যর্থ হল ফার্ডিনেন্ড।

এত রাতে তিন দিক থেকে জোরেশােরে হামলা করল খৃষ্টানরা। কিছু স ওয়ার ভৗছে গেল পুলের কাছে। কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতি স্বীকার করার পর পিছিয়ে গেল ওরা। কিলার মুহাফিজ আনন্দ করছিলেন এ বিজয়ের জন্য। পুবের এক চৌকির মুহাফিজের গাফলতিতে দুশমনের পদাতিক ফৌজ নহর পেরিয়ে এল । অনেকটা পথ ঘুরে ওরা পৌছে গেল কিল্লার কাছে। রশির সিড়ি দিয়ে কয়েকবার পাঁচিলে উঠতে চাইল ওরা। কিন্ত তীর বৃষ্টির জন্য সম্ভব হল না। কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশের বস্তির স্বেচ্ছাসেবকরা পৌছে গেল । পিছিয়ে যেতে বাধ্য হল দুশমন। নহর পেরুবার সময় হালাক হয়ে গেল এক তৃতীয়াংশ।

এই প্রথমবার লড়াইতে শরীক হওয়ার সুযােগ পেয়েছিল আতেকা। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত তার পিতাও জানতে পারেননি, অল্প ক’কদম দূরের যে ধনু থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রতিটি তীরের আঘাতে নীচ থেকে শােনা যাচ্ছিল বিকট চিৎকার, তা তার নিজেরই মেয়ের তীর।

ও ছিল পুরুষের পােশাকে। চেহারা নেকাবে ঢাকা । এ সিপাইকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য এগিয়ে গেলেন নাসির। হঠাৎ চোখে পড়ল শিরস্ত্রান থেকে বেরিয়ে থাকা একগুচ্ছ। চুল । তার দৃষ্টি ছুটে গেল সে কোমল হাতের দিকে, ফুল নিয়ে খেলা করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল যে হাত।

কপাল কুঞ্চিত হয়ে এল তার । কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি।

ও কতক্ষণ বিমূঢ়ের মত দাড়িয়ে রইল। অনুচ্চ আওয়াজে বললঃ আব্বাজান, রাগ করেছেন!

ফিরে তাকালেন তিনি । ঠোটে মৃদু হাসি। দু’চোখ অশ্রুভেজা।

ও জনাব, এ নওজোয়ান এনাম পাবার যােগ্য। এক সিপাই এগিয়ে এসে বলল । তার কাছেই দাঁড়িয়েছিলাম আমি। আমার বিশ্বাস, অন্ধকার থাকার পরও তার কোন। তীরই বৃথা যায়নি।

সেই ভরে তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নাসির বললেনঃ ‘এ নওজোয়ান আমার। মেয়ে। থানাডার আজাদীর চেয়ে বড় কোন এনামে ওর খাহেশ নেই।'

হারানাে দিনের স্মৃতিই এখন ওর অবলম্বন। এরপর এল এমন দুর্দিন, গ্রানাড়া দুমনের অবরােধে ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছিল। তার দঢ়চেতা পিতার চেহারায় ভেসে উঠছিল ক্লান্তি আর পেরেশানীর ছাপ।

করার আশপাশের চৌকিতে দশমনের প্রচন্ড হামলা চলছিল। বাইরের যখমীদের।

কর্তব্যনিষ্ঠার কারণে দু'হপ্তার মধ্যেই তার পিতার বিশ্বাস কুড়িয়েছিল সে। পঞ্চাশজন সিপাইয়ের জিম্মা দেয়া হল তাকে। তার ব্যাপারে কিল্লায় এ কথাই মশহুর ছিল যে, সে কেবল হুকুম শুনতে এবং হুকুম দিতে জানে। তার ঠোটে কেউ কোনদিন হাসি দেখেনি।

একদিন আতেকা ঘােড়া নিয়ে পূর্ব দিকে বেরিয়ে গেল । দূরে ছােট্ট ঘাটির মােড়ে ও দেখল ওতবাকে। দ্রুতগামী ঘােড়ায় সওয়ার হয়ে আসছে সে। তাকে পথ দিয়ে রাস্তার একপাশে সরে এল আতেকা। কিন্তু নিকটে এসে অকস্মাৎ ঘােড়ার বাগ টেনে ধরল ওতবা । তার দিকে এক নজর তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে বললঃ মাফ করুন। আপনার এখন আর এভাবে একা বেড়ানাে ঠিক নয়। এ চৌকি থেকে সামান্য দূরেই কাল দুশমনের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। কিল্লার মেয়ে বেরুলে তার হিফাজতের ব্যবস্থা হওয়া প্রয়ােজন। এতে কিছু মনে নেবেন না। আপনাদের জানানাে আমার কর্তব্য। দক্ষিণ দিক অনেকটা নিরাপদ। ওদিকে গেলেও আপনার সাথে কেউ থাকা দরকার।'

ও আমার জন্য ভাববেন না। বেশী দূর যাবার ইচ্ছে আমার নেই। আমায় যে পরামর্শ দিলেন নিজেও তা পালন করবেন।

৪ ‘আপনার কথা আমি বুঝতে পারিনি।' ও ‘আমি বলছি, ফৌজের অফিসারদেরও নিজের নিরাপত্তার কথা খেয়াল রাখা উচি

ও ‘আমি এ ব্যাপারে গাফেল নই। এখনাে চার ব্যক্তি রয়েছে আমার সাথে। গর্তে আছে দু’জন তীরন্দাজ। টিলার ওপর থেকে পথ পাহারা দিচ্ছে দুজন। অন্যরা আশপাশে দুশমনদের খুঁজছে। আমি ধরা পড়লেও খৃষ্টানদের কয়েদখানা আমার জন্য নতুন নয়। ওরা মেয়েদের সাথে কেমন ব্যবহার করে হয়ত আপনি জানেন না। আপনি। বাহাদুর। অনেক কিছুই শুনেছি আপনার ব্যাপারে। কিন্তু যদি কিছু মনে না করেন, আমার পরামর্শ হবে, এ পরিস্থিতিতে কিল্লায় থাকাও আপনার জন্য ঠিক নয়। কিল্লার চেয়ে গ্রামই আপনার জন্য বেশী নিরাপদ। অনুমতি পেলে আপনার আব্বাকে বলব আপনাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে


ঃ না না, তাকে পেরেশান করবেন না। কথা দিচ্ছি আমি সাবধান থাকব।'

ও আপনার সাথে থাকার এজাযত আমার দেবেন?' ওতবা গভীরভাবে তাকিয়েছিল তার দিকে। কিন্তু রাগে বিবর্ণ হয়ে গেল আতেকার চেহারা। ঘােড়ার বাগ ফিরিয়ে নিয়ে বললঃ নিজের চরকায় তেল দিন।

চোখের পলকে হাওয়ায় উড়ে হারিয়ে গেল তার ঘােড়া। এরপর দ্বিতীয়বার আর কথা বলার সুযােগ দেয়নি সে ওতবাকে। দূরে না গিয়ে কিল্লার আশপাশে ঘুরে ও ফিরে আসত। তবুও ও যখন গায়ে যেত অথবা বাইরে বেরুত, দুটো ধুসর চোখ কিল্লার কোন স্থান থেকে অনুসরণ করত তাকে।


No comments

Powered by Blogger.